স্বরভঙ্গ (Aphonia or Sore Throat) এর কারণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা
কণ্ঠস্বর হচ্ছে এক জাদুময় শক্তি! অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার অনন্য উপহার। এটি হলো যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। খুব সামান্য কারণ থেকে অনেক বড় কারণেও স্বরভঙ্গ হতে পারে। ভাঙা কণ্ঠস্বর হঠাৎ করেই হয়ে উঠতে পারে আপনার চরম অস্বস্তির কারণ। দেখা গেল, ঠান্ডা লেগেছে, গলার স্বর বসে যাচ্ছে, হঠাৎ করে হয়তো আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না—এটি স্বরভঙ্গের খুব সাধারণ একটি ঘটনা। এটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কখনো না কখনো হয়ে থাকে।
স্বরভঙ্গ /বিশেষ্য পদ/ কন্ঠস্বরের বিকৃতি ঘটিত ব্যাধি, গলা বসে যাওয়া।
স্বরভঙ্গ (Aphonia or Sore Throat) এর কারণ
- ভোকাল কর্ড বা স্বরপর্দার অসুস্থতার কারণে স্বরভঙ্গের সমস্যা হতে পারে।
- ভাইরাস বা অ্যালার্জির কারণে স্বরপর্দার প্রদাহ হলে স্বরভঙ্গ হতে পারে।
- কোনো কারণে স্বরপর্দার স্বাভাবিক কম্পন ব্যাহত হলে স্বরভঙ্গ হয়ে থাকে।
- হঠাৎ করে জোরে কথা বলা বা অনেক দিন ধরে স্বরের অপব্যবহার করা হলে এমনটা হতে পারে।
- ল্যারিংস বা স্বরনালির ক্যান্সার হলেও স্বরভঙ্গ হতে পারে। তাই বলে স্বরভঙ্গ হলেই সেটি ক্যান্সারের কারণে হয়েছে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
স্বরভঙ্গ (Aphonia or Sore Throat) এর প্রতিকার
- শ্বাসের সঙ্গে উষ্ণ বাষ্প নিলে উপকার পাওয়া যায় ।
- বাসকের রস অনেক সময় উপকারী হতে পারে।
- যদি গাঢ় কফ জমা থাকে, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস কফকে হালকা করে দেবে।
স্বরভঙ্গ (Aphonia or Sore Throat) এর প্রতিরোধ
- ঠান্ডা এড়িয়ে চলা ।
- কখনোই খুব জোরে কথা বলা বা চিৎকার করা উচিত নয়।
- এমনকি কণ্ঠস্বরনির্ভর কাজ করলেও খেয়াল রাখা উচিত , যে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে জোরে কথা বলা না হয়।
- শিক্ষকেরা বড় শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করুন।
স্বরভঙ্গ (Aphonia or Sore Throat) এর ঘরোয়া চিকিৎসা
স্বরভঙ্গ রোধ করার সবথেকে সহজ ও কার্যকরী উপায় হল গড়গড়া করা।
- লবণ ও পানি:- এক কাপ গরম পানির মধ্যে এক চতুর্থাংশ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে পারেন।
- লেবু ও পানি:- এক কাপ গরম পানির সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে শরবত এর ন্যায় পান করতে পারেন।
- আদা, লেবু ও মধু:- আদা শুকিয়ে গুঁড়া করে এক চামচ আদার গুঁড়া, এক চামচ মধু ও অর্ধেক লেবুর রস ও আধা কাপ গরম পানি নিন। এবার, প্রথমে আদা গুঁড়ার সাথে পানি মিশিয়ে নিয়ে । তারপর মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে গড়গড়া করতে পারেন। মধু গলার স্বর ঠিক করতে সহায়তা করে । বাকি উপাদানগুলো গলার জীবাণুমুক্ত করতে সহায়তা করে।
- ঝাল সস ও পানি:- গোল মরিচের গুঁড়া ব্যাথা ও প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করে। পাঁচটি গোল মরিচের গুঁড়ার সাথে এক কাপ গরম পানি মিশিয়ে গড়গড়া করুন। এর ফলে গলা জ্বলতে পারে। কিন্তু, অবশ্যই স্বরভঙ্গ ঠিক হয়ে যাবে। ১৫ মিনিট পর পর এই মিশ্রণটি ব্যাবহার করুন।
- তুলসী পাতা ও পানি:- তুলসী পাতা স্বরভঙ্গ দূর করতে, ব্যাথা মুক্ত করতে ও নাকের স্ফীত দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার রস, চিনি, ফিটকিরি, ভিনেগার ও পানি একত্রে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করা হয়। এই দ্রবণটি স্বরভঙ্গ রোধ করে।
- হলুদ ও পানি:- বৈজ্ঞানিক মতে, হলুদ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ দূর করে। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করে। এক কাপ গরম পানিতে আধা চামচ লবণ ও আধা চামচ হলুদ মিশিয়ে গড়গড়া করতে পারেন । এতে স্বরভঙ্গ দূর হবে।
- লবঙ্গ চা:- এক থেকে তিন চামচ লবঙ্গের গুঁড়া গরম পানির সাথে মিশিয়ে গড়গড়া করতে পারেন । এতে যে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে তা গলা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। গলার প্রদাহজনিত সমস্যাও দূর করে।
উৎস : prothomalo.com, bd24live.com,