বায়োকেমিক বারোটি ঔষধ

১। ক্যাল্কেরিয়া ফ্লোরিকাম CaF2

ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড

ফ্লোরাইড অব লাইম

ইহা এক প্রকার সহজ লভ্য খনিজ পদার্থ স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ ও নানা রং এর নানা আকারে পাওয়া যায়। ইহা পানিতে দ্রবীভুত হয়। বিশুদ্ধ ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড বিচুর্ণ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করিয়া ঔষাধার্থে ব্যবহৃত হয়।

ইহা দেহস্থ অন্ডলালা নামক পদার্থের সহিত মিশ্রিত হইয়া মাংশ পেশীর মাঝে স্থিতিস্থাপক সুত্র, অস্থির আবরন ও সংযোগ টিসু তৈরী করে তন্ত ও শিরার গাত্রে অবস্থান করে। ইহার অভাবে দ্বিবিধ লক্ষন দেখা যায়, ১) কোন কোন স্থানের শিথিলতা ২) কোন কোন স্থানে প্রস্তরবৎ কঠিনতা। অন্ড লালার সহিত মিশ্রিত হইয়া ইহা দন্ত ও অস্থির উপরস্ত আবরন সৃষ্টি করে। দন্ত ও অস্থির ন্যায় ইহা শিরা, ধমনী ও চর্মের উপরিভাগে ক্রিয়া প্রকাশ করে। ইহার অভাবে শিরা ও ধমনীর স্থিতিস্থাপক তন্তু কোন রসবাহী প্রনালী অথবা সংযোজক তন্তুতে রক্ত ও রক্তস্থ কঠিন পদার্থাদি অশোধিত হইতে পারে না ফলে ঐ সকল স্থানে স্ফীতি জন্মে স্ফীতির ফলে স্থিতিস্থাপক তন্তু সমূহ শিথিল ভাব ধারন করে। অস্থির আবরনে ইহার অভাব হইলে অস্থির উপর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং টিউমার (অস্থির অর্বুদ) উৎপন্ন হয়। এই জন্য শরীরের যে কোন যন্ত্র যে কোন রোগবশতঃই হোক না কেন,যদি প্রস্তরবৎ কঠিন হয় তাহা হইলে ইহার অভাব জনিত ক্রিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলিয়া জানা যায় এবং উক্ত লক্ষণে এই ঔষধ কখনও বিফল হয় না।

সকল পীড়ায় গরমে ভাল থাকে ঠান্ডায় ও সঞ্চালনে সমস্ত লক্ষনের বৃদ্ধি।

জরায়ুর শিথিলতা এবং তার জন্য রক্ত স্রাব, গর্ভাস্রাব, ভ্যাাদাল বেদনা, জরায়ুর স্থানচ্যুতি, চোখের ছানি, হার্নিয়া, স্রাবী-অস্রাবী সকল প্রকার অর্শে, হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষে পানি বৃদ্ধি এবং তা শক্ত, অন্ডকোষের শীর্নতা কটিবাত, সর্দ্দি ও কাশিতে দুর্গন্ধ রক্তস্বল্পতা,স্বরভঙ্গ, কোষ্ঠ কাঠিন্য, দন্ত ক্ষয়, অস্থির অর্বুদ, স্নায়ূশূল ও অঞ্জনি প্রভৃতি রোগে এই ঔষধটি অত্যন্ত সফলতার সহিত ব্যবহৃত হয়।

২। ক্যালকেরিকা ফসফরিকাম (CaHPO4,2H2O(CaHO4,2H2O)

ফসফেট অফ লাইম,ক্যালসিয়ম ফসফেট

এ্যান্টিসোরিক, এ্যান্টি সাইকোটিক,এ্যান্টিটিউবার কুলার

ডাঃ হেরিং সর্ব প্রথম চুনের জলের মধ্যে ডাইলিউট ফসফরিক এসিড ক্রমশ মিশ্রিত করিয়া এক প্রকার শ্বেতবর্ণ তলানী প্রস্তুত করেন। পরে উহা পরিশ্র“ত পানিতে উত্তমরূপে ধৌত ও জলীয় উত্তাপে শুস্ক করিয়া ঔষধার্থে ব্যবহার করেন। ইহা পানি অথবা এ্যালকোহলে দ্রবীভূত হয় না।

দেহস্থ অন্ড লালাবৎ পদার্থ সহযোগে ইহা ক্যালসিয়াম ফসফেট সঠিক ভাবে সরবরাহ করে। সমস্ত কোষেই ইহার উপস্থিতি আছে (হাড়ের কোষে সবচেয়ে বেশি পরিমানে) এবং নতুন কোষ নির্মানে ইহা প্রয়োজনীয় উপাদান। শিশু ভুমিষ্ট হইবার পর যখন তাহার হাড় অপুষ্ট থাকে তখন এই ঔষধ ব্যবহারে শিশুর অপুষ্ট হাড় পুষ্ট হয়। ইহা পাকস্থলীর উপর তীব্র ক্রিয়া প্রকাশ করে।

গ্রীষ্ম কালে, উষ্ণ গৃহে প্রবেশ করিলে স্থীরভাবে শয়নে রোগ লক্ষন উপশমিত হয়। বর্ষাকালে, ঋতু পরিবর্তনে, ঠান্ডায় ও সঞ্চালনে বৃদ্ধি হয়।

বালক, বয়স্ক লোকের হাড় ভাঙ্গিয়া গেলে ইহা ব্যবহারে হাড় জোড়া লাগিয়া যায়, স্ত্রী লোকের কামোম্মাদ, শিশুদের দন্তোদগমকালীন উদরাময়, জ্বর, তড়কা প্রভৃতি উপসর্গে মন্ত্রের ন্যায় কাজ করে। এ্যানিমিয়া, হরিৎপান্ডু, বৃদ্ধ লোকেদের মাথা ঘোরা, ছাত্র-ছাত্রীদের শীরঃপীড়া তৎসহ কপালে ঘর্ম, মুত্র গ্রন্থিতে বেদনা, অত্যন্ত গরম প্রস্রাব, অন্ডকোষের বেদনা এবং কোন রোগ ভোগের পর ইহার ব্যবহার অপরিহার্য। সবুজ বর্ণ, পিচ্ছিল ও দুর্গন্ধ যুক্ত তরল উষ্ণমল বায়ু সহ নির্গত হইলে ইহার অভাব বোঝা যায়।

ইহার নিম্নক্রম অধিকদিন ব্যবহার করা উচিৎ নয়। ইহাতে অনিষ্ট হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে।
৩। ক্যালকেরিয়া সালফিউরিকম্ (CaSo4,2H2O)

ক্যালসিয়াম সালফেট

সালফেট অব লাইম

জিপসাম, প্লাষ্টার অব প্যারিস

ইহা এক প্রকার শ্বেত বর্ণ দানাদার পদার্থ। ইহা ক্যালকেরিয়া মিউরেটিকা সলিউশনের সহিত ডাইলিউটিড সালফিউরিক এসিড মিশ্রিত করিয়া দুগ্ধ শর্করা সহযোগে ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।

এই ঔষধের ক্রিয়া সমস্ত সিরাস-ঝিল্লি, শ্নৌস্মিক-ঝিল্লি, সকল স্থানের ক্ষত টিউবার কুলার ক্ষত ইত্যাদির উপর দেখা যায়। টিসু মধ্যস্থ অকেজো পদার্থ সমূহকে বের করে দেওয়াই ইহার মূল কাজ।

শুস্ক উত্তপ্ত বায়ু ও উম্মুক্ত বায়ুতে ভাল থাকে ও ঠান্ডায়, ঠান্ডা জলে ও ঋতু পরিবর্তন কালে সমস্ত রোগ লক্ষন বৃদ্ধি পায়।

ইহার রোগীর মনের মতলব কোন সময়ই ঠিক থাকেনা। অত্যন্ত অস্থির ও ভুলো মনের হয়। শিশুদের মাথায় ক্ষত ও হলুদ বর্ণের পুঁজ বের হয়। মাথা চুলকালে চুলের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হয়। চক্ষু প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অবিরত সর্দ্দি ঝরে তৎসহ রক্তের ছিট দেখা যায়। খাওয়ার পর পাকস্থলিতে জ্বালা বৃদ্ধি পায়। দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপাত, যকৃতের উপর স্ফোটক,গুহ্যদ্বার দিয়ে পুঁজ কিংবা রক্তপাত, মুত্র রোগ, মুত্র নালির প্রদাহ, ঘা ও লালবর্ণ মুত্র, প্রমেহ পীড়ায় পুঁজ নিঃসরণ। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, বক্ষে বেদনা হইলে এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী। পীড়ার নাম যাহাই হউক না কেন যদি হলুদ বর্ণের গাঢ় পুঁজ স্রাব এবং ঐ স্রাব যদি বহু দিন হইতে বের হবার ইতিহাস থাকে তবে নিশ্চিন্ত মনে এই ঔষধ ব্যবহার করা যায়।

৪। ফেরাম ফসফরিকম্ (FePo4,4H2O)

ফসফেট অব আয়রন

এ্যান্টিসোরিক, এ্যান্টিটিউবার কুলার

ফসফেট অব সোডিয়াম ও ফসফেট অব আয়রন এই দুটি পদার্থের সংমিশ্রনে ইহা প্রস্তুত করা হয়। মূলত বিশুদ্ধ ফসফেট অব আয়রন হইতে দুগ্ধ শর্করা সহযোগে এই ঔষধ প্রস্তুত করা হয়।

সঞ্চালনে বেদনা, মুক্ত বায়ুতে কাশি, রাত্রিতে বা ভোর ৪ টা হইতে ৬টা পর্যন্ত যে কোন পীড়ার বৃদ্ধি।

বাইওকেমিক চিকিৎসায় ইহার ব্যবহার এত বিস্তৃত যে ভাবতেও অবাক লাগে। ইহা মানুষের শরীরে প্রতিলিটার রক্তে প্রায় আধা গ্রেণ পরিমাণে বিদ্যমান।

রক্তে (হিমোগ্লোবিন) রক্ত নালী সমূহ, পেশী এবং সন্ধি সমূহের সৌত্রিক তন্ত, পাকস্থলী নাড়ীভুড়ি ও জরায়ুর উপর ইহার প্রধান ক্রিয়া ক্ষেত্র। প্রদাহত প্রদাহ জনিত রোগ, রক্তাস্রাব, কপালের উভয় লালবর্ণ এবং চোখের পাতা ভারী বোধ। অত্যন্ত জ্বর কানে সূঁচ ফোঁটার মতো ব্যথা। রক্তের আধিক্যের জন্য কালা, রোগী কিছুই শুনতে পায় না। আঘাতের ফলে রক্তপাত। মুখ মন্ডল লাল হয় চোখ ছলছল করে। পাকস্থলীতে জ্বালা, গলার মধ্যে ব্যথা গিলিতে কষ্ট হয়। অনিচ্ছায় মুত্রপাত, অর্শ্ব রোগের জন্য রক্তপাত, মলদ্বারে ব্যাথা, রক্ত শুন্যতা, শ্বেত প্রদর, পেশী ও সন্ধি সমূহের বাত, দন্ত বেদনা, প্রভৃতি রোগে এবং লালবর্ণের রক্ত স্রাবে ইহা অব্যর্থ।

জ্বরের প্রাথমিক অবস্থায় ৬ঢ শক্তি ১০/১৫ মিনিট পরপর তাপমাত্রা না কমা অবধি ব্যবহার করা যায়। এই ঔষধ রাত্রীকালে ব্যবহার না করাই উত্তম। ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। ছাত্র ছাত্রীগন রাত জেগে পড়াশুনার জন্য অনেক সময় ইহা ব্যবহার করেন।


৫। কেলি মিউরিয়েটিকাম্ (KCL)

পটাসিয়াম ক্লোরাইড

বিশুদ্ধ পটাসিয়াম ক্লোরাইড দুগ্ধ শর্করা সহযোগে চুর্ণ প্রস্তুত করিয়া ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।

দেহস্থ অন্ডলালাবৎ পদার্থের সহিত মিশ্রিত হইয়া ইহা শরীরস্থ ফাইব্রিন নামক পদার্থ সৃষ্টি করে। পটাসিয়াম ক্লোরাইড কর্নিয়া, মধ্য কর্ণ, শ্লেষ্মিক ঝিল্লি, লসিকা গ্রন্থি, ফুসফুস, বক্ষাবরক-ঝিল্লি, অন্তাবরক-ঝিল্লি, সন্ধির মাস্তক-ঝিল্লি প্রভৃতির উপর ক্রিয়া প্রকাশ করে। সকল প্রকার প্রাদাহিক পীড়ায় ক্ষতের স্রাবে এরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পাংশু বা শ্বেতবর্ণ ময়লা যুক্ত জিহ্Ÿা এই ঔষধের অভাব নির্দেশ করে।

ফেরাম ফস যে রূপ প্রাদাহিক পীড়ায় প্রথম অবস্থায় উপযোগী তদ্রুপ কেলি মিউর দ্বিতীয় অবস্থায় উপযোগী। যে কোন স্থানের স্রাব যদি গাঢ় শ্বেতবর্ণ আঠাযুক্ত ও সৌত্রিক পদার্থ যুক্ত হয় তাহা হইলে ইহা বিশেষ ফলপ্রদ।

তৈলাক্ত খাদ্য ও অন্যান্য গুরুপাক দুস্পাচ্যদ্রব্য আহারে পেটের পীড়ার বৃদ্ধি, ঠান্ডা লাগিয়া সর্দ্দি, উজ্জল আলোকে ও ঠান্ডায় চক্ষুর পীড়ার বৃদ্ধি হইয়া থাকে। ধীরভাবে শুইয়া থাকিলে উষ্ণ স্বেদ লাগাইলে পীড়ার উপশম হয়।

সর্ব প্রকার চক্ষুর পীড়ায়, কানের ব্যথা, ডিপথেরিয়া, অর্জীন উদরাময় প্রভৃতি রোগে যদি জিহ্বার লক্ষণ দেখা যায় তবে কেলি মিউরই উপযোগী। মাথার ক্ষত, সাদা মামড়ি পড়ে। চক্ষুর পাতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানা দানা উদ্ভেদ ও সাদা পুঁজ, কানে ব্যথা ও বধিরতা, সর্র্দ্দি, গাঢ় সাদা শ্লেষ্মা বের হয়। ইহা রক্ত আমাশয়, প্রমেহ ও সফট শ্যাঙ্কার পীড়ার প্রধান ঔষধ। যকৃত, মুত্র যন্ত্র ও হৃৎপিন্ডের বিকৃতি বশত শোথ, শোথাক্রান্ত স্থান উজ্জল শ্বেতবর্ণ, ঘুংড়ি ও হুপিং কাশি, শ্বেত প্রদর, সুতিকাজ্বর, দুগ্ধজ্বর, বাতজ্বর, বয়োব্রণ, হাম, বসন্ত ইত্যাদি রোগে কেলিমিউর মন্ত্রের ন্যায় কাজ করে।

ইহার তৃতীয় মাত্রা শ্বেত প্রদর রোগে নিশ্চিন্ত মনে ব্যবহার করা যায়।

৬। কেলি ফসফরিকম K2HPO4

ফসফেট অব পটাশ

এ্যান্টিসোরিক ও এ্যান্টিটিউবার কুলার

পটাশিয়াম হাইড্রেটের সহিত ফসফরিক এ্যাসিডের জলীয় দ্রবন মিশ্রিত করিয়া তাপ প্রয়োগে পানি দূর করিয়া ইহা প্রস্তুত করা হয়। বিশুদ্ধ ফসফেট অব পটাস দুগ্ধ অন্ডালালার সহিত মিশিয়া কেলি ফস মস্তিস্কের গ্রে-ম্যাটার নামে পদার্থ তৈরী করে। মস্তিস্কের গ্রে-ম্যাটার, স্নায়ু এবং মাংশ পেশীতে কেলি ফস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। টিসু গঠনের জন্য কেলি ফস শ্রেষ্ঠ ঔষধ। স্নায়ু মন্ডলের উপর ইহা বিশেষ ভাবে ফলপ্রদ। সকল প্রকার দৌর্বল্যে কেলি ফসই প্রধান ঔষধ। সামান্য কারনে বিরক্ত হওয়া, অত্যন্ত অবসন্নতা, তেজহীনতা ও অস্থিরতা, স্মরন শক্তি হ্রাস, মস্তিস্কের ক্লান্তি, সংঙ্গাহীনতা, প্রলাপ বকে, রোগী বিশ্বাস করে না, কোন প্রকার চিন্তা করিতে পারে না।

প্রাতঃকালে, নীর্জনতায় অধিক সঞ্চালনে ও ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

মানসিক পীড়া, উন্মাদ, হিস্টিরিয়া, অতিরিক্ত শুক্রক্ষয়, অনিদ্রা, মুখের ক্যান্সার, কলেরা, শূল বেদনা, টাইফয়েড জ্বর, শ্বেত প্রদর, শিরঃপীড়া, অতিরিক্ত ধাতুস্রাব, স্নায়বিক কারন হেতু মধুমেহ, ধাতুদৌর্বল্য,যন্ত্রনাযুক্ত একজিমা, পৃষ্ঠ বেদনা ইত্যাদি সহ যে কোন প্রকার পক্ষাঘাত এর জন্য ইহাই শ্রেষ্ঠ ঔষধ। যে কোন প্রকার জ্বর বিকার দেখা দিলে কেলিফস ৬ী কয়েক মাত্রা দিলেই আশ্চর্য জনক ফল পাওয়া যায়। এই ঔষধের নিম্নক্রমে বেশী ফল হয়।
৭। কেলি সালফিউরিকম্ K2SO4

পটাশিয়াম সালফেট

এ্যান্টিসোরিক, এ্যান্টিটিউবার কুলার

ইহা আগ্নেয়গিরিতে উৎপন্ন হয়। ইহার ৪/৬ কোণ থাকে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানা বিশিষ্ট বর্ণহীন ও শক্ত হয়। ইহার স্বাদ লবনাক্ত, তিক্ত ও ঝাঁঝ যুক্ত। মূল ঔষধ দুগ্ধ শর্করা যোগে ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।

ক্যালি সালফ শরীরের এপিডার্মিস বা চামড়ার উপরের পাতলা আবরন ও পিথিলিয়ামের উপর কাজ করে। রক্তস্থ লৌহময় পদার্থ ও শরীরের তৈলাক্ত পদার্থের সহিত ইহা মিশ্রিত হইয়া শরীরের সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহ করে। শরীরের তৈলাক্ত পদার্থের উপর ইহার বিশেষ প্রভাব আছে। ইহা প্রদাহের শেষ অবস্থার ঔষধ।

সর্ব প্রকার স্রাবই পিচ্ছিল ও আঠা বা চটচটে এবং হলূদ বা সবুজ বর্ণের, জিহ্বার উপর হলুদ বর্ণের পিচ্ছিল ময়লা জমিলে ইহার অভাব অনুভব করা যায়।

স্নায়ুশূল, বাত অথবা যে কোন প্রকারের বেদনাই হউক না কেন যদি বেদনা স্থান পরিবর্তনশীল হয় তবে ইহা উপযোগী।

বসন্ত বা হামে দানা সকল বসিয়া গেলে ইহা প্রয়োগে পুনরায় বাহির হইয়া রোগী চিকিৎসার যোগ্য হয়। শ্বেত প্রদর হলুদাভাব, হলুদ সর্দ্দি স্রাব, সর্দ্দি বসিয়া শীরঃপীড়া স্রাব, পীড়া লক্ষণের হ্রাস বৃদ্ধি, লুপ্ত উদ্ভেদের পুনুরূত্থান ক্ষমতা, শুস্ক ও খসখসে চামড়া মসৃণ করিবার ক্ষমতা এবং বেদনার প্রকৃতি এই পাঁচটি স্মরণ রাখিলে এই ঔষধের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা সহজ হইয়া যাইবে।

সন্ধ্যাকালে, উত্তপ্ত রুদ্ধ গৃহে পীড়া লক্ষনের বৃদ্ধি এবং মুক্ত শীতল বাতাসে, মধ্য রাতের পর ও সকল প্রকার শীতলতায় পীড়া লক্ষনের আরাম হওয়া কেলি সালফের প্রধান প্রয়োগ লক্ষন।

শীরঃপীড়া, খুস্কি, চক্ষু প্রদাহ, কর্ণ প্রদাহ, মুখমধ্যে জ্বালা, ওষ্ঠে ক্যান্সার, সর্দ্দি, অর্শ, অজীর্ণ, প্রমেহ, মুত্রাশয় প্রদাহ, বাত, হাম, বসন্ত, শ্বেত প্রদর, শ্বাস যন্ত্রের প্রদাহ প্রভৃতি রোগের জন্য ইহা অত্যন্ত ফলপ্রদ।

৮। ম্যাগনেশিয়াম ফসফরিকাম্ MgHPO4,7H2O

ফসফেট অব ম্যাগনেশিয়া

ফসফেট অব সোডা ও সালফেট অব ম্যাগনেশিয়া একত্রে মিশ্রিত করিয়া ইহা প্রস্তুত করা হয়। পানিতে আংশিক দ্রবীভুত হয় কিন্তু উত্তাপে পুনরায় জমাট বাঁধিয়া যায়। দুগ্ধ শর্করা সহযোগে ইহার বিচুর্ণ প্রস্তুত হয়।

শরীরস্থ অন্ডলালিক পদার্থের সহিত ম্যাগ ফস মিশ্রিত হইয়া স্নায়ু ও পেশীর শ্বেত বর্ণের সুত্র প্রস্তুত করে। যখন ইহার অভাব ঘটে তখনই উক্ত শ্বেত সুত্র সমূহের সংকোচন ঘটে এবং সংকোচনই আক্ষেপ। ম্যাগ ফসই সর্ব প্রকার আক্ষেপ বা শূল বেদনার মহৌষধ।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুমন্ডলী, প্রান্তস্থ স্নায়ু, পেশী সমূহ এবং সকল শুন্য অঙ্গের উপর ইহার প্রধান ক্রিয়া।

চাপন বা সঞ্চালণ, শীতল বায়ু, আর্দ্র আবহাওয়া, চিৎ হইয়া শয়নে আহার ও খোলা জায়গায় বেড়াইলে বৃদ্ধি। সজোরে সঞ্চালনে ও উত্তাপ লাগাইলে উপশম।

মস্তিস্কে পীড়া, কর্ণ কুহরে আক্ষেপিক বেদনা, উদরশূল, রক্ত আমাশয়, দৃষ্টি শক্তির ক্ষীনতা, অক্ষিপটে স্পন্দন ও ব্যাথা অনুভুত, শিশুদের কোষ্টবদ্ধতা, মুত্র পাথরী, ঋতু কালে রমণীর কষ্ট, ঋতু রক্ত কাল ঝুলের মত।

৯। নেট্রাম মিউর NaCl

সোডিয়াম ক্লোরাইড,খাবার লবন
পরিশোধিত সাধারন খাবার লবন দুগ্ধ শর্করা সহযোগে ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়। ইহা শরীরস্থ সমগ্র তরল ও টিসুতে বিদ্যমান এবং শরীরের তরল অংশ নিয়ন্ত্রন করে।

ইহার অভাবে কোষ্ঠবদ্ধতা, শিরঃপিড়া, সর্বদা মনমরা, অবসাদগ্রস্থ হইয়া থাকে।

প্রাতঃকালে, গ্রীস্মকালে, বর্ষাকালে, পুর্ণিমায়, প্রচাপনে, কুইনাইন ব্যবহারের পর বৃদ্ধি। খোলা বাতাসে, শীতল জলে স্নান করিলে, উদরপূর্ণ আহার না করিলে, কঠিন শয্যায় ও দক্ষিণ পর্শ্বে শয়নে উপশম হয়।

মস্তিস্ক বেদনা, মাইগ্রেন, মন অতিশয় অবসাদগ্রস্থ, চক্ষু হইতে জল পড়ে, দৃষ্টি ভ্রম, কর্ণ প্রদাহ, কর্ণে স্ফীতি জনিত বধিরতা, ঠান্ডা লাগিয়া সর্দ্দি, মাঢ়ি দিয়া সামান্য কারনে রক্ত পড়ে। অনিয়মিত ঋতু, স্ত্রী লোকের জননেন্দ্রিয়ের শুস্কতা, মুত্র মার্গে জ্বালা, চর্ম্ম পীড়া, নিদ্রাহীনতা বা অতি নিদ্রা। রাত্রিতে প্রগাঢ় নিদ্রা হইলে দৈহিক ক্লান্তি মিটে না প্রাতঃকালে অলসতা জড়াইয়া ধরে এমত লক্ষণে এই ঔষধ ব্যবহার্য।

১০। নেট্রাম ফস Na4HPO4 . 12H2O

ফসফেট অফ সোডা

সোডিয়াম ফসফেট দুগ্ধশর্করা সহযোগে শক্তিকৃত করিয়া ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।

এই লাবনিক পদার্থের অভাব ঘটিলে মানসিক লক্ষণের ব্রতিক্রম হয়। সর্বদাই মনে উদ্বেল,উৎকন্ঠা ও খিটখিটে ভাবের উদয় হয়। রক্ত কনিকা প্রতে মাংশ পেশী,স্নায়ু কোষ ম স্তীস্কের কোষে ও টিসু তরলে ইহার অবস্থান দেখা যায়।

সামান্য কারনে মনে ভয়ের সঞ্চার স্মৃতি শক্তি কমে যায়। কোন কিছু মনে রাখতে পারে না। কর্ণের পীড়ায় কর্ণের পাতায় এত চুলকায় যে ক্ষতের সুষ্টি হইয়া রক্তপাত ঘটে ও হলুদ রং এর পুজঁ নিঃসরন হয়। মাঢ়ী দিয়ে রক্ত পড়ে ও দাঁত ক্ষয়ে যায়। ক্রিমি অত্যাচারে বমন তৎসহ জ্বর।

১১। নেট্রাম সালফ Na2

সোডিয়াম সালফেট দুগ্ধ-শর্করা সহযোগে শক্তিকৃত করিয়া ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।

ভিজা আর্দ্র ঘরে বা এলাকায় বসবাসের কারনে যে সকল উপসর্গ দেখা দেয় সেই সব ক্ষেত্রে ইহা উপযোগী ঔষধ।

পিত্তের সহযোগে নিস্ক্রান্ত পদার্থ যথা সর্দ্দি কফ, মলমুত্র, ঘাম সকল হলুদ বর্ণ ধারন করে। এমত অবস্থায় ছাড়াও রক্তপিত্ত জনিত বিবিধপীড়া যেমন পিত্তজ্বর, স্বল্পবিরাম জ্বর, সবিরাম জ্বর,বহু ব্যাপক সর্দ্দি, বহুমুত্র, পিত্তবমি ইত্যাদী লক্ষণ নেট্রাম সালফ সেবনে বিমুক্ত হইয়া থাকে।

১২। সাইলিসিয়া SiO2 . XH2O সিলিকা

বালু, কোয়ার্টস, পিওর ফ্লিন্ট। দুগ্ধ-শর্করা সহযোগে শক্তিকৃত করিয়া ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।

যে সমস্ত শিশুদের দেহ শীর্ণ বা অপুষ্ট অথচ পেট ও মাথা বড় হইয়া যায়, যাহাদের মাথার সংযোগ অস্থি ভুমিষ্ট হইবার পর সহজে শক্ত হয় না, এবং যে সমস্ত রোগ অমাবস্যা ও পুর্ণিমায় বৃদ্ধি পায় সে সমস্ত রোগ দুরীভূত করিতে সাইলেশিয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।
মনের মধ্যে সর্বদা বিশৃংখলা ভাব। শীত কালে মাথায় খুস্কি ও দাদ দেখা যায়। চক্ষুর পাতায় ক্ষুদ্র আব বা অঞ্জনী। মুখশায়ী গ্রন্থির বেদনা ও স্ফিতি। সামান্য কারনে বা আঘাতে ক্ষত হয়, সহজে শুকাইতে চায়না ও অধিক মাত্রায় পুজঁ নিসঃরন হয়। চোখে নখে নালী ঘা,সর্দ্দি আটকায়ে চক্ষুর উপরে দক্ষিন দিকে ব্যাথা। শিশুদের স্বাভাবিক কোষ্ঠবদ্ধতা,