চুল পড়ার কারণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা
চুল পড়া একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। নারীপুরুষ উভয়েরই এই সমস্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। বংশগত, পরিবেশগত, দুশ্চিন্তা ও পুষ্টিহীনতাসহ নানা কারণে চুল পড়তে পারে। প্রথম দিকে চুল কম পড়লেও আস্তে আস্তে চুল পড়ার হার অনেক বেড়ে যায়। তাই শুরু দিকে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে, চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। ফিজিওলজিক্যাল এলোপেসিয়ায় সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৫০/১০০টি চুল পড়ে যায়। এই পড়ার তুলনায় গজানোর পরিমাণ যদি কমে যায় তখন মাথার চুল কমতে শূরু করে। তবে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এন্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়ায় চুল পড়া সাধারণত বেশি দেখা যায়। ইহা সাধারণত মাথার নির্দিষ্ট কোনো একটি জায়গায় চুল পড়ে যায়। যেমন কপালের দুই সাইড থেকে অথবা মাথার মাঝখান থেকে যাহা সাধারণত এন্ড্রোজেনিক হরমোনের আধিক্যের কারণে হয়ে থাকে।
চুল উঠার/পড়ার কারণ
শতকরা ৯৫ ভাগচুল পড়ার কারণ জিনগত/ বংশগত ।এ কারণে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মাথার মাঝখানের ও কপালের দুই পাশের এবং মেয়েদের মাথার উপরিভাগের ওদু’পাশের চুল পাতলা হয়ে যায়।
খুস্কি তো চুলের বিশ্বস্ত শত্রু, চুল তো সে ফেলবেই।
অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা, স্টাইল করা ও রঙ করা চুলের জন্য ক্ষতিকর।
থাইরয়েড হরমোনজনিত বালিভারের সমস্যাজনিত কারণেও চুল পড়তে পারে।
কেমোথেরাপি নিলে চুল পড়ে যায়।
মহিলাদের মেনোপজ হলে অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে চুল পড়ে।
অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল করছেন ? সাবধান! এতেও কিন্তু চুল পড়ে।
ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জনিত ইনফেকশনের কারণে চুল কমে
চুলের অযত্ন হলে সে কি আর থাকে মাথায়?
কেমিক্যাল ব্যবহারেও চুল পড়ে।
মানসিক চাপ চুলের উপরেও চাপ তৈরি করে
পরিবারের কারো রিউমাটয়েড আথ্রাটিস, হাজল, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া ইত্যাদি রোগ থাকলে সেই পরিবারের লোকজনের চুল পড়া রোগও হতে পারে।
রক্তস্বল্পতা, যেমনঃ আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা চুল পড়ার কারণ ।
বিভিন্ন রকমের রোগ যেমনঃ ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ যেমন- লুপাস, মূত্রনালীর প্রদাহ, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ইত্যাদি চুল পড়ার কারণ।
নানা ধরনের ওষুধ যেমনঃ জন্মনিয়ন্ত্রিন পিল, এনটি ডিপ্রেসেন্ট, বিটা ব্লকার, কিছু এনএসএআইডি, ইমিউনো সাপ্রেসিভ এজেন্টস ইত্যাদি সেবন করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পড়ে যেতে পারে।
হঠাৎ করে ওজন কমে যাচ্ছে ? চুলও কমে যেতে পারে।
হজমের সমস্যায়ও চুল পড়তে দেখা যায়।
প্রয়োজন মতো না ঘুমালে কিন্তু মাথায় চুল খুঁজে নাও পেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় চুল পড়তে পারে।
বড় কোন অপারেশনের পর চুল পড়তে পারে।
ভিটামিন ই কম খেলেও চুল কমতে পারে
অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ খাবেন না, চুল কিন্তু পড়তে পারে।
অতি কর্মব্যস্ততা চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
গরমে চুল পড়া বেড়ে যায়।
ভুল সংশোধন
লম্বা সময় টুপি পড়ে থাকলে চুল পড়া বাড়ে।
শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে।
লম্বা চুল চুলের গোড়ায় বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে।
কালার বা কন্ডিশনিংয়ের কারণে চুল পড়ে।
ম্যাসাজিং করে চুল পড়া বন্ধ করা যায়।
এগুলো কোনটাই সঠিক নয়।
প্রতিরোধ
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই চুল পড়া ঠেকানো সম্ভব। তবে সে জন্যে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে
চুলের গোড়ায় যেন জল না জমে।
চুল এর গোড়াঘেমে গেলে তা তাড়াতাড়িশুকিয়ে ফেলুন।
আপনার হেয়ার ড্রায়ার টি কুল ও লো সেটিংস এ রাখুন এবং ফ্ল্যাট আয়রন কম ব্যবহার করুন।
একদিন বা দুই দিন পর পরমাথায় শ্যাম্পু দিন।
আপনার চুলকে তার স্বাভাবিক রঙের চেয়ে এক বা দুই শেড এর বেশী রঙ করবেন না।
নিজের পরিষ্কার ও শুকনো গামছা বাতোয়ালে দিয়ে মাথা মুছবেন।
এক বা দুই সপ্তাহ পরপরবা কমপক্ষে মাসে একবার নিজের বালিশের কভার ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
পরিষ্কার চিড়নী দিয়ে চুল আচড়াবেন, তবে জোরে জোরে নয়।
ভেজা চুল বাঁধবেন না, আঁচড়াবেন না, বেশি টানাটানিও করবেন না।
খুব টেনে চুল বাঁধাও ভাল নয়।
প্রতিদিন শাক-সবজি, মাছ, ফল, দুধ, ডিম, দই, পনির, ডালইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে খাবেন, খেয়াল রাখবেন যেন প্রতিদিনের খাবারে জিঙ্ক, ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, ফোলেট, ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে।
দোকানে চুল কাটালে বাসায় এসে শ্যাম্পু করবেন কিন্তু।
যাদের মাথা শুষ্ক তারা মাথায় কন্ডিশনার ব্যবহার করলে ভালহয়।
বৃষ্টিতে মাথা ভেজাবেন না।
রাতেপ্রয়োজন মতো ঘুমাবেন।
ঐ সব প্রসাধনী থেকে দূরে থাকুন যা আপনার মাথায় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে।
প্রতিকার
হ্যাঁ, আছে, অবশ্যই আছে, তবে চিকিৎসার আগে কারণটা নির্ণয় করতে হবে। নির্দিষ্ট কারণ শনাক্ত করা গেলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, চুল পড়া প্রতিরোধে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে।
টাক হওয়ার চিন্তায় মাথায় টাক না ফেলে আজ থেকে সতর্ক হয়ে যান, যত্ন নিন আপনার চুলের, প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করুন, আর যেন অতিরিক্ত হারে না পড়ে আপনার মূল্যবান চুল।