কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা এর কারণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা
কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা হলো মানুষের, কতিপয় রঙ দেখার, সনাক্ত করার বা তাদের মধ্যে পার্থক্য করার অক্ষমতাজনিত এক প্রকার শারীরিক বৈকল্য। সাধারণত প্রতি ১০জন পুরুষে একজনের এই সমস্যা দেখা যায়।
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বিশেষ কিছু রঙ দেখতে পায় না। এমন না যে তারা চিনতে পারে না, আসলে তারা দেখতেই পারে না। এটা এক ধরনের অসুখ, যেটা “বর্ণান্ধতা” নামে পরিচিত, যাদের এ রোগ আছে তাদের বর্ণান্ধ বলা হয়। বর্ণান্ধরা মূলত মৌলিক রঙগুলো দেখতে পায় না। আপনারা হয়তো জানেন না যে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ একজন বর্ণান্ধ, তিনি লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙ দেখতে পান না, তাই ফেসবুকের রঙ দেয়া হয়েছে আকাশী যা তিনি ভালোভাবে দেখতে পান।
কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা এর কারণ ও বিবরণ
বর্ণান্ধতা জন্মগত কিংবা অর্জিত হতে পারে। জন্মগত বর্ণান্ধতার কারণে লাল ও সবুজ রঙয়েই বেশি সমস্যা হয়, আর অর্জিত বর্ণান্ধতার কারণে নীল ও হলুদ রঙ শনাক্ত করতে সমস্যা হয়। যেসব কারণে মানুষ বর্ণান্ধ হতে পারে সেগুলো হল:-
বংশগত :
- (জেনেটিক) মা-বাবা বর্ণান্ধ হলে সন্তানেরাও বর্ণান্ধ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়গুলো হল:-
- নারীর চেয়ে পুরুষে বর্ণান্ধতা বেশি পরিলক্ষিত হয়
- বর্ণান্ধ মায়ের ছেলেসন্তান সবসময় বর্ণান্ধ হয়
- মা-বাবার উভয়েই বর্ণান্ধ হলে, তাদের মেয়েসন্তান বর্ণান্ধ হয়
অর্জিত:
- চোখের বিভিন্ন রোগ
- চোখে আঘাত লাগা
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া(বাত রোগের জন্য হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইনিন সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখের রঙ্গিন পিগমেন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়া)
- ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব
- বার্ধক্য
কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা এর প্রকারভেদ
পরীক্ষা যা দেখা যায় তাঁর উপর ভিত্তি করে, বর্ণান্ধত্ব সম্পূর্ন বা আংশিক হতে পারে। সম্পূর্ন বর্ণান্ধত্বের সংখ্যা, আংশিক বর্ণান্ধত্বের তুলনায় অনেক কম। কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা তিন ধরনের হতে পারে।
লাল-সবুজ কালার ব্লাইন্ডনেস
প্রোটানোপিয়া(Protanopia), ডিউটারনোপিয়া(Deuteranopia), প্রোটানোমালি(Protanomaly), এবং ডিউটারনোমালিটি(Deuteranomaly) সাধারণভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া লাল-সবুজ রঙের বর্ণান্ধত্ব যা জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে প্রভাবিত করে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের রেটিনার লাল ও সবুজবর্ণের আলোকসংবেদী কোষের(photoreceptor) অনুপস্থিতি বা পরিবর্তনের কারণে লাল সবুজ বর্ণের মধ্যে পৃথকীকরণে সমস্যা থাকে। এটি বংশগত। জন্মসূত্রে লাল-সবুজ রঙের অন্ধত্ব নারীদের তুলনায়, পুরুষকে প্রভাবিত করে অনেক বেশি। কারণ লাল ও সবুজ রং আলোকসংবেদীগুলির জন্য জিনগুলি এক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে উপস্থিত থাকে, যা পুরুষের মাত্র একটি এবং নারীর দুটি থাকে। নারী (৪৬, এক্সএক্স), যদি তাদের উভয় এক্স ক্রোমোজোমেই একই রকম অসুবিধার কারণে ত্রুটিপূর্ণ হয় তবেই লাল-সবুজ রঙের অন্ধত্ব হয়, সেখানে পুরুষের (৪৬, এক্স ওয়াই) বর্ণান্ধত্ব হয় যদি তাদের একক এক্স ক্রোমোজোম ত্রুটিপূর্ণ হয়।
নীল-হলুদ কালার ব্লাইন্ডনেস
ট্রাইটানোপিয়া(Tritanopia) এবং ট্রাইটানোমালি(Tritanomaly) যাঁদের আছে তাঁদের নীলাভ এবং সবুজাভ বর্ণের মধ্যে পৃথকীকরণে অসুবিধা আছে , সেইসাথে হরিদ্রাভ এবং লালচে বর্ণের পৃথকীকরণে অসুবিধা আছে।
ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংবেদনশীল কোন সিস্টেমের নিষ্ক্রিয়তা ঘটিত বর্ণান্ধত্ব( যার শোষণ বর্ণালীর শীর্ষে নীলাভ-বেগুনি) ট্রাইটানোপিয়া বলা হয় বা, ঢিলেঢালাভাবে, নীল-হলুদ বর্ণান্ধত্ব।
কমপ্লিট কালার ব্লাইন্ডনেসে
সম্পূর্ন বর্ণান্ধত্বটি কোন রঙ দেখতে অসমর্থতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এটি প্রথাগতভাবে জন্মগত বর্ণান্ধত্ব রোগ বোঝায়(কোণ কোষের একবর্ণিতার থেকে বেশি রড, কোষের একবর্ণিতা)
এই ধরনের মানুষজনের দুনিয়ায় সাদা,কালো আর ধূসর রং ছাড়া আর কোনো রংই নেই। তাঁদের কাছে পুরো জীবনটাই রঙিন ছবির সাদা-কালো স্কেচের মতো।