সাইনুসাইটিস কী ? কারন, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা
সাইনুসাইটিস একটি অতি সাধারণ রোগ। শতকরা পঁচিশ শতাংশ মানুষ উক্ত রোগে ভুগে থাকে। নাকের চারপাশে অস্থিসমূহে বাতাসপূর্ণ কুঠুরি থাকে যাদেরকে সাইনাস বলা হয়। সাইনুসাইটিস হলো উক্ত সাইনাস সমূহের ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন। সাইনাসসমূহের কাজ :
১. মাথাকে হালকা রাখা,
২. মস্তিষ্ককে আঘাত হতে রক্ষা করা,
৩. সাইনাসগুলো কণ্ঠস্বরকে অনুরণিত এবং সুরেলা করে,
৪. দাঁত ও চোয়াল গঠনে সহায়তা করে,
৫. মুখমন্ডল গঠনে সাহায্য করে।
সাইনাসের প্রদাহের কারণ সমূহ :
সাইনাসসমূহের প্রদাহের মধ্যে ম্যাগাজিলারি সাইনাসের প্রদাহ সবচেয়ে বেশি হয়। নাকের ইনফেকশন থেকে শতকরা নববই ভাগ। উপরের দাঁতের ইনফেকশন যা উপরের চোয়াল থেকে ছড়ায় এবং এটা ম্যাগজিলারি সাইনাস বা কুঠুরির কাছাকাছি অবস্থিত।
রোগের লক্ষণসমূহ :
নাকের পাশে, মাথার সামনের দিকে এবং মাথার দুই পাশে ব্যথা। মাথা ভারী হওয়া বা ভারী ভারী লাগা। নাক দিয়ে পানি পড়া। নাক বন্ধ থাকা। কাজকর্মে অনীহা।
চিকিৎসা :
সাইনাসের ইনফেকশনের জন্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। যেহেতু সাইনুসাইটিস একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়টিক খেতে হবে। ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। নাকের ড্রপ এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ নেয়া যায়। নাকে গরম পানির ভাব (মেনথল দিয়ে) নিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ক্রনিক সাইনুসাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ বা প্রদাহ। নাকের চারপাশে অস্থিসমূহে বাতাসপূর্ণ কুঠুরি থাকে যাদেরকে সাইনাস বলা হয়। সাইনুসাইটিস হলো উক্ত সাইনাসসমূহের ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন।
সাইনাসের প্রদাহের কারণসমূহ :
সাইনাসসমূহের প্রদাহের মধ্যে ম্যাগজিলারি সাইনাসের প্রদাহ সবচেয়ে বেশি হয়। একিউট সাইনুসাইটিস এবং শ্বাসনালীর উপরের অংশের ইনফেকশন থেকে এলার্জি, অপুষ্টি, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ হতে, দীর্ঘদিন ধরে দাঁতের রোগ থেকে হতে পারে। অপর্যাপ্ত পরিমাণে ফুসফুসের রক্তে অক্সিজেনের সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রবেশ। শ্বাসনালীর ছিদ্র চিকন হওয়া। বেশির ভাগ সাইনাসের প্রদাহ নাকের ইনফেকশন থেকে হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণসমূহ :
নাকের পাশে অনবরত ব্যথা, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ব্যথা হতে পারে। সবসময় নাক বন্ধ থাকা। কোন স্বাদ ও ঘ্রাণ বুঝতে না পারা। সাধারণত বিমর্ষতা, অস্থিরতা এবং অনীহা জাগা। মাঝে মাঝে জ্বর আসা। মিউকোসার আবরণ পাতলা হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসা :
সাইনাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ বা ইনফেকশনের জন্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়া ধুলাবালি, ধূমপান এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। দাঁতের ক্ষয় এবং অন্যান্য পচনশীল পদার্থ থেকে দাঁতকে রক্ষা করতে হবে। ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। যেহেতু ক্রনিক সাইনুসাইটিস একটি ব্যকটেরিয়াজনিত অসুখ, সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়টিক খেতে হয়।
ওষুধের মাধ্যমে ভাল না হলে, সাইনাস ওয়াশ করতে হবে। অনেকের মাঝে ভুল ধারণা আছে, একবার সাইনাস ওয়াশ করলে বার বার করতে হয়। ধারণাটা সঠিক নয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত সাইনুসাইটিস ওয়াশ করে উপযুক্ত মাত্রা এবং নিয়মে এন্টিবায়টিক খেলে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে। বর্তমানে সাইনাস রোগের চিকিৎসায় এন্ডোসকোপিক সাইনাস সার্জারি করা হয়। এর মাধ্যমে এন্ডোসকোপ এবং মনিটরে দেখে সাইনাসের সব ধরনের সার্জারি করা যায়। এটা সাইনাসের সব রোগের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা। উক্ত অপারেশনে বেশি কাটা-ছিঁড়া করতে হয় না। যার ফলাফল খুবই ভাল হয়। বাংলাদেশের বড় বড় হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত এন্ডোসকোপিক সাইনাস সার্জারি হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
এমবিবিএস, ডিএলও, এমএস (ইএনটি)
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি
মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।