কনজাংটিভাইটিস(conjunctivitis) বা চোখ ওঠার কারণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা

আমাদের চোখের সাদা অংশটুকু একটা পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে—যার নাম কনজাংটিভা। এই কনজাংটিভায় যখন সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়, তখন এর সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো লালচে হয়ে ওঠে এবং পুরো চোখের সাদাটুকুই তখন লাল হয়ে যায়। এর সঙ্গে থাকে আরও কিছু উপসর্গ। যেমন চুলকানি, অস্বস্তি, ব্যথা, আলোক সংবেদনশীলতা, ঘন সাদাটে বা হলদেটে নিঃসরণ ইত্যাদি। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কনজাংটিভাইটিসের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস। তবে অ্যালার্জি, ঠান্ডা সর্দি বা চোখ কোনো রাসায়নিক বা ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে এলেও কনজাংটিভায় প্রদাহ হয় ও চোখ লাল দেখায়। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠায় পাতলা বর্ণহীন পানি পড়ে বেশি। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে নিঃসরণটি ঘন ও একটু হলদেটে হয়ে থাকে।

লক্ষণ ও উপসর্গ


চোখের চারপাশে হালকা লাল রং হতে পারে।
চোখের পাতা ফুলে যায়।
চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে।
চোখ থেকে পানি পড়তে পারে।
চোখ থেকে ঘন হলুদ অথবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা জাতীয় পদার্থ বের হতে পারে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের দুই পাতা লেগে থাকে।

নবজাতকের বেলায়


নবজাতকের চোখ ওঠা একটি বিশেষ বিষয়। ওষুধপত্র দিলেও নবজাতকের চোখ দুই-তিন দিন লাল অথবা ফোলা থাকতে পারে। যদি লালাভ রং এবং ফোলা দীর্ঘসময় ধরে থাকে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।

কারণ


সংক্রমণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হতে পারে।
তা ছাড়া সাধারণত ময়লা, ধুলোবালি দ্বারা অথবা কোনও কেমিক্যাল যেমন মেডিসিন, কিংবা সাজসজ্জার সময় প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।

করণীয়


যে সব কারণে বিশেষত অ্যালার্জিক কোনও বস্তু, কেমিক্যাল কিংবা পরিবেশ দ্বারা চোখ ওঠে সে সব বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে।

শিশুর চোখ ওঠার ক্ষেত্রে

হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখের পাতাগুলো খোলা রাখতে হবে।
বড় বাচ্চারা চোখে কালো চশমা পরতে পারে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে


যখন আপনার শিশুর চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের তরল পদার্থ বের হয়।
শিশু যখন চোখ ব্যথার কথা বলে।
প্রচণ্ড সূর্যালোকেও চোখ ব্যথা করলে।
যখন চোখে একদমই কিছু দেখতে পারে না অথবা পারলেও দেখতে সমস্যা হয়।
যখন পরিবেশগত বিষয়ে কিংবা কোনও অ্যালার্জিক বস্তুর জন্য চোখে অসুবিধা অনুভব করে।
শিশুর বয়স যদি ২ মাসের কম হয়।
চোখের পাতা যদি ফুলে ওঠে কিংবা লাল হয়ে যায়।

বর্জনীয়


কোনও রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
শিশুকে জোর করে চোখ খুলতে বলা যাবে না।

জটিলতা


কর্নিয়ায় ঘা,কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রতিকার


বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস পরিবারের এক জনের থেকে অন্য জনের হতে পারে। সুতরাং এ সব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবার পৃথক কাপড়, তোয়ালে থাকতে হবে।
পুরো হাত ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে।
যে সব বিষয় শিশুর জন্য অ্যালার্জিক তা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।