পলিপাস বা পলিপ কী ? কারণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা

নাকের পলিপ প্রচলিত একটি রোগ। এলার্জির কারণে সাধারণত নাকের পলিপ হয়। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না নিলে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

নাকের পলিপ হলো দীর্ঘ মেয়াদি এলার্জি। নাকের যদি এলার্জি হয় বা সংক্রমণ হয়, এটি হতে হতে নাকের যে ঝিল্লি আছে, মিউকাস মেমব্রেন আমরা বলি, এর মধ্যে পানি জমে যায়। পানি হয়ে অনেকটা আঙ্গুর ফলের মতো ফুলে যায়। ফুলে নাকের ভেতরে চলে আসে।একে বলা হয় নাকের পলিপ।

তবে নাকের পাশে তিনটি মাংসের পিণ্ড রয়েছে। একটিকে বলি ইনফিরিয়র টার্মিনেট, অন্য দুটিকে মিডেল টার্মিনেট ও সুপিরিয়র টার্মিনেট বলি। ইনফিরিয়র টার্মিনেট দুই পাশে বড়। এই ইনফিরিয়র টার্মিনেটকে পলিপ বলে বিভিন্ন অপচিকিৎসা করা হয়। একটি স্বাভাবিক অংশকে পলিপ হিসেবে ধরে নেয়। তবে পলিপ আসলে সেটি নয়।

কীভাবে বুঝবেন তাঁর নাকে পলিপ হয়েছে?
তার নাক বন্ধ থাকবে। তার দীর্ঘমেয়াদি নাক দিয়ে পানি আসবে। নাকে এলার্জি থাকবে বা নাকে সংক্রমণ থাকবে। ক্রমান্বয়ে নাক বন্ধ থাকবে। একদিকে অথবা দুই দিকেই নাক বন্ধ হয়ে যাবে। মাথা ব্যথা করবে। সেটি অনেকদিন ধরে হতে পারে। তখনই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে এলে সেটি তিনি দেখবেন।

পলিপের দুই রকম ভাগ আছে। একটি হলো ইথময়েডাল পলিপ। আরেকটি হলো, অ্যানথ্রোকরনাল পলিপ। নাকের দুই পাশে যে সাইনাস আছে। ইথময়েডাল সাইনাসে দেখা যায়, নাকের ওপর থেকে উঠে নিচের দিকে পলিপগুলো আসে এবং এলার্জি যাদের বেশি তাদের বেশি হয়। দুই পাশে অনেকগুলো হয়।

সাধারণত বয়স্ক লোকদের এসব বেশি হয়। আর অ্যানথ্রোকরনাল যেটা, মেক্সিলারি সাইনাস থেকে নাকে ডান বা বাম পাশে উঠে নাকের পেছনে চলে যায়। এটা একদিকে হয় এবং একটাই হয়। এটা তরুণ বয়সেও হতে পারে।

এটি আসলে দেখলেই বোঝা যায়। পলিপটা হবে সাদা, আঙ্গুর ফলের মতো। এটা যদি আমরা কিছু দিয়ে স্পর্শ করি এর কোনো সেন্স থাকবে না। টার্মিনেট হবে একটু লালচে, এটা লেটারাল ওয়ালের সাথে লাগানো থাকবে। আর পলিপের চারপাশে দেখা যায় ঝুলন্ত।

আর টার্মিনেট স্পর্শ করলে সাথে সাথে হাঁচি উঠবে। এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। পাশাপাশি এক্স-রে রয়েছে। আজকাল এন্ডোস্কোপি করা হয়। আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে দেখতে পাই। এমনকি রোগীকে দেখিয়ে দেই।

একবার অস্ত্রোপচার করলে আবার পলিপ হয় কি না? তখন বারবার অস্ত্রোপচার করতে হয় কি না?
এই প্রশ্নটি নাকের বেলায় সবাই করে। যেকোনো রোগী একবার অস্ত্রোপচার করার পর আবার করতে হতে পারে। পলিপ আবার হতে পারে। যেকোনো রোগও আবার হতে পারে। জ্বর হলেও আবার হতে পারে। মাথা ব্যথা হলেও আবার হতে পারে।ডায়রিয়া হলেও আবার হতে পারে। স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হলেও আবার হতে পারে। প্রতিটা রোগই তো আবার হতে পারে। তাই নাকের বেলায়ও হতে পারে।

সময় মতো যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া না হয় তাহলে কী জটিলতা হতে পারে?
পলিপ হলে খাবারের সময় স্বাদ পাবে না। এটি মস্তিস্কের দিকে যেতে পারে। সংক্রমণ হতে পারে। মস্তিস্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় নাকের পেছন দিয়ে তালুর পেছনে, গলায় ঝুলতে পারে। তখন খেতে অসুবিধা হয়।

প্রতিরোধের উপায়
প্রতিরোধ হলো অ্যালার্জি যাদের আছে, তাদের এটি এড়িয়ে যেতে হবে। কী কারণে এলার্জি হচ্ছে, সেটি এড়িয়ে যেতে হবে। আর এলার্জি যদি বেশি হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর চিকিৎসা নিতে হবে।

স্টেরয়েড স্প্রে আছে, মন্টিলুকাস আছে-এগুলো দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। যাদের তীব্র এলার্জি আছে, তাদের নাকে যেন সংক্রমণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আর পলিপ হবে না।

নাকের যত্ন কীভাবে নিতে হবে?
প্রথমত নাক পরিষ্কার করা ভালো। তবে খুব জোরে নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নাকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কাজ করার পর হাতমুখ ধুয়ে নেব, নাকও পরিষ্কার করে নেব। এলার্জি যাদের আছে, তাদের আগে বুঝতে হবে কিসে এলার্জি হচ্ছে।

ঘরের ধুলাবালি, বাইরের ধুলাবালি, খাবার, সিনথেটিক কাপড়, পারফিউম, ফুলের রেণু, কসমেটিক, পরিবেশ দূষণ এগুলো থেকে এলার্জি হতে পারে। সেই দিকটি অবশ্যই মাথায় রেখে সেভাবেই সতর্ক হয়ে চলতে হবে।