পাইলস এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

জীবনে কম-বেশি পাইলসের সমস্যায় ভোগেননি, এমন মানুষের সংখ্যা অতি সামান্য। পাইলস বলতে আমরা বুঝি মলদ্বারে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া। মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হওয়া এবং মলদ্বারের বাইরে কিছু অংশ ঝুলে পড়ে আবার ভেতরে ঢুকে যায় ইত্যাদি। পাইলস, গেজ বা অর্শ মানুষের জটিল ও কঠিন ব্যাধির মধ্যে অন্যতম। হোমিওপ্যাথিতে বিনা অপারেশনে মেডিসিনের সাহায্যে চিকিৎসা হয়ে থাকে। মলদ্বারের ভেতরের ও বাইরের শিরা স্ফীত, চর্ম শক্ত ও কুঞ্চিত হয়ে ছোট বলির সৃষ্টি হয়। পাইলস দেখতে আঙুর ফলের থোকার মতো।

পাইলসের প্রকার
পাইলস দুই প্রকার। ১. রক্ত অর্শ(Piles because of blood);; ২. বায়ুজনিত অর্শ (Piles because of gass or Air);;

রক্ত অর্শ : রক্ত অর্শের ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত, হলদে কিংবা লালচে পানির মতো পদার্থ বের হয়।

বায়ুজনিত অর্শ : এক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা লালচে বা হলদে পানি দেখা যায় না; কিন্তু মলদ্বারে চুলকানি, অসহনীয় ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকর কারণে মলদ্বারে ফোলা থাকে।

কারণ : যেসব রোগী পাইলস বা অর্শ রোগের সমস্যায় ভোগেন তাদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং ডায়রিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পেটে গ্যাসও জমা হয়, পায়খানা ক্লিয়ার হয় না, পায়খানার সঙ্গে মিউকাস বা আম যায়। গুরুপাক বা মশলাজাতীয় খাবার যেমনÑ কোরমা-পোলাও, অতিরিক্ত ঝালজাতীয় খাবার ও গরুর গোশত খেলেও হজমে গোলমাল দেখা দেয়। সহজে মলত্যাগ হতে চায় না, মলদ্বারে আঙুল দিয়ে মলত্যাগ করতে হয়। যাদের ‘আইবিএস’ আছে তাদের এই জাতীয় সমস্যা ও পাইলস হতে পারে। মলত্যাগের সময় কিছু মাংসপি- বের হয়ে আবার ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকে রোগ নিয়ে ভোগে তারপরও লজ্জায় রোগের কথা প্রকাশ করে না। যার কারণে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়। তখন অপারেশন ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য, বারবার সুতা কৃমির আক্রমণ, অধিক সহবাস, অর্জিন রোগে বেশি দিন ভোগা, মহিলাদের গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে চাপ পড়লে, সবসময় বসে কাজ করা, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, কোষ্ঠবদ্ধতার কারণে জোরে বেগ দিয়ে মলত্যাগ করা, দীর্ঘদিন রাত জেগে কাজ করা, বাবা-মার থাকলে সন্তানেরও এই রোগ হতে পারে।

লক্ষণ : মাঝে মাঝে বলিতে চুলকায়, দপদপ করে, টাটানি এবং জ্বালাকর বেদনা। মলদ্বারে বা পায়খানার রাস্তায় কাঁটা থাকার অনুভূতি মনে হয়। তাছাড়া বেদনা ও জ্বালা, মলত্যাগের সময় কোঁত দেওয়া। কোমরে ব্যথা দেখা দিতে পারে, মলত্যাগের সময় বলি থেকে রক্তস্রাবও হয়। অর্শ থেকে রক্তস্রাব হলে রক্তস্রাবি অর্শ, রক্তস্রাব না হলে অন্ধ বা অস্রাবি অর্শ বলে।

চিকিৎসা : বিশেষ করে যাদের পাইলস বড় এবং বাইরে বেরিয়ে আসে, এমন অবস্থায় অপারেশন ছাড়া হোমিও মেডিসিনের সাহায্যে চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। আর অপারেশন করলে মলদ্বারের চতুরদিকে তিন জায়গায় বেশকিছু অংশ কাটতে হয়। ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয় এবং মলত্যাগেও অনেক ব্যথা হয়। অনেকের দেখা যায় অনবরত সামান্য রক্ত ও পুঁজের মতো নিঃসরণ হয়। ক্ষতের স্থান শুকাতে দেরি হয়। অপারেশনের পর মলদ্বার ছোট ও সংকুুচিত হয়ে জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অর্শ রোগীকে আরোগ্য করা সম্ভব। রোগীর শারীরিক, মানসিক ও দৈহিকসহ সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন করে তা প্রয়োগ করলে সমস্যা কষ্টেহীন ও অপারেশন ছাড়াই দূর হবে ইনশাআল্লাহ।

নাক্স ভূমিকা, সালফার, পডোফাইলাম, পালসেটিলা, ইস্কিউলাস, কলিনসোনিয়া, কার্বোভেজ, কলিনসোনিয়া, হ্যামামেলিস, অ্যাসিড মিউর, অ্যালো, ইগনেসিয়া,হ্যামামেলিস, পিওনিয়া, এব্রোটেনাম, ক্যাপসিকাম, এসিড নাইট্রিক, এমন কার্ব, আর্সেনিক এল্ব, একোনাইট ন্যাপ, ইস্কুইলাস হিপ, এসিড মিউর, এমন মিউর, প্লান্টেগো, ক্যালিকার্ব, এন্টিম ক্রড, হিসার সালফ, লাইকোপডিয়াম সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পরামর্শ : পায়খানা পরিষ্কার হয়, এমন খাবার খাওয়া উচিত। যেমন: শাকসবজি, আঁশজাতীয় খাবার, ফলমূল বেশি খাওয়া, ইসপগুলের ভুসির শরবত পান করা ইত্যাদি। পূর্ণবয়স্ক লোকের দৈনিক ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। সবধরনের তৈলাক্ত খাবার গুরুপাক, অতিরিক্ত মশলাজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, ঝালজাতীয় খাবার ও বাসি খাবার পরিত্যাগ করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে।