কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা হলো মানুষের, কতিপয় রঙ দেখার, সনাক্ত করার বা তাদের মধ্যে পার্থক্য করার অক্ষমতাজনিত এক প্রকার শারীরিক বৈকল্য। সাধারণত প্রতি ১০জন পুরুষে একজনের এই সমস্যা দেখা যায়।
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বিশেষ কিছু রঙ দেখতে পায় না। এমন না যে তারা চিনতে পারে না, আসলে তারা দেখতেই পারে না। এটা এক ধরনের অসুখ, যেটা “বর্ণান্ধতা” নামে পরিচিত, যাদের এ রোগ আছে তাদের বর্ণান্ধ বলা হয়। বর্ণান্ধরা মূলত মৌলিক রঙগুলো দেখতে পায় না। আপনারা হয়তো জানেন না যে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ একজন বর্ণান্ধ, তিনি লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙ দেখতে পান না, তাই ফেসবুকের রঙ দেয়া হয়েছে আকাশী যা তিনি ভালোভাবে দেখতে পান।
কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা এর কারণ ও বিবরণ
বর্ণান্ধতা জন্মগত কিংবা অর্জিত হতে পারে। জন্মগত বর্ণান্ধতার কারণে লাল ও সবুজ রঙয়েই বেশি সমস্যা হয়, আর অর্জিত বর্ণান্ধতার কারণে নীল ও হলুদ রঙ শনাক্ত করতে সমস্যা হয়। যেসব কারণে মানুষ বর্ণান্ধ হতে পারে সেগুলো হল:-
বংশগত :
(জেনেটিক) মা-বাবা বর্ণান্ধ হলে সন্তানেরাও বর্ণান্ধ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়গুলো হল:-
নারীর চেয়ে পুরুষে বর্ণান্ধতা বেশি পরিলক্ষিত হয়
বর্ণান্ধ মায়ের ছেলেসন্তান সবসময় বর্ণান্ধ হয়
মা-বাবার উভয়েই বর্ণান্ধ হলে, তাদের মেয়েসন্তান বর্ণান্ধ হয়
অর্জিত:
চোখের বিভিন্ন রোগ
চোখে আঘাত লাগা
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া(বাত রোগের জন্য হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইনিন সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখের রঙ্গিন পিগমেন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়া)
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব
বার্ধক্য
কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা এর প্রকারভেদ
পরীক্ষা যা দেখা যায় তাঁর উপর ভিত্তি করে, বর্ণান্ধত্ব সম্পূর্ন বা আংশিক হতে পারে। সম্পূর্ন বর্ণান্ধত্বের সংখ্যা, আংশিক বর্ণান্ধত্বের তুলনায় অনেক কম। কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা তিন ধরনের হতে পারে।
লাল-সবুজ কালার ব্লাইন্ডনেস
প্রোটানোপিয়া(Protanopia), ডিউটারনোপিয়া(Deuteranopia), প্রোটানোমালি(Protanomaly), এবং ডিউটারনোমালিটি(Deuteranomaly) সাধারণভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া লাল-সবুজ রঙের বর্ণান্ধত্ব যা জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে প্রভাবিত করে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের রেটিনার লাল ও সবুজবর্ণের আলোকসংবেদী কোষের(photoreceptor) অনুপস্থিতি বা পরিবর্তনের কারণে লাল সবুজ বর্ণের মধ্যে পৃথকীকরণে সমস্যা থাকে। এটি বংশগত। জন্মসূত্রে লাল-সবুজ রঙের অন্ধত্ব নারীদের তুলনায়, পুরুষকে প্রভাবিত করে অনেক বেশি। কারণ লাল ও সবুজ রং আলোকসংবেদীগুলির জন্য জিনগুলি এক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে উপস্থিত থাকে, যা পুরুষের মাত্র একটি এবং নারীর দুটি থাকে। নারী (৪৬, এক্সএক্স), যদি তাদের উভয় এক্স ক্রোমোজোমেই একই রকম অসুবিধার কারণে ত্রুটিপূর্ণ হয় তবেই লাল-সবুজ রঙের অন্ধত্ব হয়, সেখানে পুরুষের (৪৬, এক্স ওয়াই) বর্ণান্ধত্ব হয় যদি তাদের একক এক্স ক্রোমোজোম ত্রুটিপূর্ণ হয়।
নীল-হলুদ কালার ব্লাইন্ডনেস
ট্রাইটানোপিয়া(Tritanopia) এবং ট্রাইটানোমালি(Tritanomaly) যাঁদের আছে তাঁদের নীলাভ এবং সবুজাভ বর্ণের মধ্যে পৃথকীকরণে অসুবিধা আছে , সেইসাথে হরিদ্রাভ এবং লালচে বর্ণের পৃথকীকরণে অসুবিধা আছে।
ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংবেদনশীল কোন সিস্টেমের নিষ্ক্রিয়তা ঘটিত বর্ণান্ধত্ব( যার শোষণ বর্ণালীর শীর্ষে নীলাভ-বেগুনি) ট্রাইটানোপিয়া বলা হয় বা, ঢিলেঢালাভাবে, নীল-হলুদ বর্ণান্ধত্ব।
কমপ্লিট কালার ব্লাইন্ডনেসে
সম্পূর্ন বর্ণান্ধত্বটি কোন রঙ দেখতে অসমর্থতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এটি প্রথাগতভাবে জন্মগত বর্ণান্ধত্ব রোগ বোঝায়(কোণ কোষের একবর্ণিতার থেকে বেশি রড, কোষের একবর্ণিতা)
এই ধরনের মানুষজনের দুনিয়ায় সাদা,কালো আর ধূসর রং ছাড়া আর কোনো রংই নেই। তাঁদের কাছে পুরো জীবনটাই রঙিন ছবির সাদা-কালো স্কেচের মতো।
কালার ব্লাইন্ডনেস(Color Blindness) বা বর্ণান্ধতা এর টেস্ট
গ্লুকোমা হলো চোখের একপ্রকার রোগ যাতে অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও চোখ অন্ধ হয়ে যায়। গ্লুকোমা অনেক প্রকারের হয় যেমন ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, নরমাল টেনশন গ্লুকোমা অন্যতম । ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ধীরে ধীরে হয় ফলে চোখে ব্যথা অনুভূত হয় না। চিকিৎসা না করালে প্রথমে পার্শ্বীয় দৃষ্টি, তারপর কেন্দ্রীয় দৃষ্টি নষ্ট হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতে হয়। ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো চোখে তীব্র ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, চোখের মণি বা তারারন্ধ্র বড়ো হয়ে যাওয়া, বমিভাব। গ্লুকোমার কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে তা স্থায়ীভাবে কমে।
এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ (intraocular pressure) বেড়ে যাওয়া, পরিবারের অন্য সদস্যের এই রোগ থাকা, উচ্চ রক্তচাপ, অতিস্থুলতা ইত্যাদি। ইন্ট্রাওকুলার প্রেসার ২১ মি.মি. পারদ চাপের বেশি থাকলে গ্লুকোমার আশঙ্কা বেশি। তবে চোখের চাপ স্বাভাবিক থাকলেও গ্লুকোমা হতে পারে যেমন নরমাল-টেনশন গ্লুকোমা।
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে দৃষ্টিশক্তি অটুট রাখা সম্ভব। ওষুধের মাধ্যমে চোখের চাপ স্বাভাবিক রাখা হয়।গ্লুকোমা চিকিৎসায় অনেক রকম ওষুধ রয়েছে। এছাড়া কিছুক্ষেত্রে লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া যায়। ওষুধে ভালো না হলে বিভিন্ন সার্জিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার চিকিৎসা জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। সারাবিশ্বে প্রায় ৬৭ মিলিয়ন লোক গ্লুকোমায় আক্রান্ত। সাধারণত বয়স্ক লোকের বেশি হয়। ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা মহিলাদের বেশি হয়। সারাবিশ্বে ছানির পরে গ্লুকোমা অন্ধত্বের দ্বিতীয় কারণ।
গ্লুকোমা কী?
গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল রোগ, যাতে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। এমনকি এতে একসময় রোগী অন্ধত্ববরণ করতে বাধ্য হয়। তবে সময়মতো ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে এ অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চচাপ এর জন্য দায়ী।
গ্লুকোমা সম্পর্কে জানা জরুরি কেন?
১. আমাদের দেশে এবং পৃথিবীব্যাপী অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হল চোখের গ্লুকোমা। ২. অনেক ক্ষেত্রে এ রোগের লক্ষণ রোগী বুঝতে পারার আগেই চোখের স্নায়ু অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ৩. এ রোগে দৃষ্টির পরিসীমা বা ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে এবং কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি অনেকদিন ঠিক থাকে বিধায় রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে অনেক দেরি করে ফেলেন। ৪. গ্লুকোমা চোখের অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব তৈরি করে। তাই একবার দৃষ্টি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। ৫. চোখের গ্লুকোমা রোগ হলে রোগীকে সারা জীবন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। অনেকেই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকেন না বা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করেন না। ফলে এ রোগ নীরবে ক্ষতি করে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়।
কেন এ রোগ হয়?
এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অদ্যাবধি চোখের উচ্চচাপই এ রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত চোখের উচ্চচাপই ধীরে ধীরে চোখের স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দৃষ্টিকে ব্যাহত করে। তবে কিছু কিছু রোগের সঙ্গে এ রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায় এবং অন্যান্য কারণেও এ রোগ হতে পারে। যেমন-
পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের (মা, বাবা, দাদা, দাদি, নানা, নানি, চাচা, মামা, খালা, ফুপু) এ রোগ থাকা।
১. উচ্চবয়স (চল্লিশোর্ধ্ব)। ২. ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। ৩. মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা। ৪. রাত্রিকালীন উচ্চরক্তচাপের ওষুধ সেবন। ৫. স্টেরোইড নামক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করা। ৬. চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে। ৭. চোখের অন্যান্য রোগের কারণে। ৮. জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি।
এগুলোর মধ্যে শুধু চোখের উচ্চচাপই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।
গ্লুকোমা রোগের লক্ষণ কী?
অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এ রোগের কোনো লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন-
১. ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া। ২. চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা। ৩. ঘন ঘন মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া। ৪. দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোনো পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা। ৫. মৃদু আলোয় কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া। ৬. ছোট ছোট বাচ্চার অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
গ্লুকোমার জন্য কাদের চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি?
১. যাদের পরিবারে নিকটাত্মীয়ের এ রোগ আছে। ২. চল্লিশোর্ধ্ব প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে যাদের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। ৩. চোখে যারা মাঝে মাঝে ঝাপসা দেখেন বা ঘন ঘন চোখ ব্যথা বা লাল হওয়া অনুভব করেন। ৪. যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে। ৫. যারা চোখে দূরের জন্য মাইনাস গ্লাস ব্যবহার করেন।
গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসা
গ্লুকোমা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব; কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের মতো এ রোগের চিকিৎসা সারা জীবন করে যেতে হবে। এ রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায়; তার জন্য আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
এ রোগে প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে
১. ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা ২. লেজার চিকিৎসা ৩. শৈল্য চিকিৎসা বা সার্জারি
যেহেতু চোখের উচ্চচাপ এ রোগের প্রধান কারণ; তাই ওষুধের দ্বারা চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। একটি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তদুপরি তিন মাস অন্তর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এ রোগের নিয়মিত কতগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে- এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। যেমন-
১. দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ২. চোখের চাপ পরীক্ষা ৩. দৃষ্টিব্যাপ্তি বা ভিজুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা ৪. চোখের নার্ভ পরীক্ষা।
এ রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা ও তার পরামর্শ মেনে চলা। যেহেতু অধিকাংশ রোগীর চোখে কোনো ব্যথা হয় না, এমনকি তেমন কোনো লক্ষণ অনুভূত হয় না, তাই রোগী নিজে, এমনকি রোগীর আত্মীয়স্বজনরাও এ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা অব্যাহত রাখেন না; ফলে অনেক রোগী অকালে অন্ধত্ববরণ করে থাকেন। ওষুধ ছাড়াও গ্লুকোমার অন্যান্য চিকিৎসা রয়েছে, যার সিদ্ধান্ত প্রয়োজনে বা সময়মতো চিকিৎসক গ্রহণ করতে পারেন। যেমন- লেজার চিকিৎসা এবং শল্য চিকিৎসা; যার দ্বারা এ রোগে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
গ্লুকোমা রোগে রোগীর করণীয়
১. চিকিৎসক রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করে তার চোখের চাপের মাত্রা নির্ণয় করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন, তা নিয়মিত ব্যবহার করা। ২. দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, তাই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। ৩. সময়মতো চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) করে দেখা যে, তার গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। ৪. পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করে গ্লুকোমা আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া।
সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে একজন গ্লুকোমা রোগী তার স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।
পরিশেষে মনে রাখবেন, গ্লুকোমা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ; যার কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে আপনার চক্ষু পরীক্ষা করে চোখের চাপ জেনে নিন।
চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন, আপনার বা পরিবারের কারও গ্লুকোমা আছে কি না। গ্লুকোমা প্রতিরোধ করুন, অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকুন। আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে, সুন্দর দৃষ্টিশক্তি নিয়ে, পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
ডা. ইফতেখার মো. মুনির অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, গ্লুকোমা বিভাগ, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
আমাদের চোখের সাদা অংশটুকু একটা পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে—যার নাম কনজাংটিভা। এই কনজাংটিভায় যখন সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়, তখন এর সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো লালচে হয়ে ওঠে এবং পুরো চোখের সাদাটুকুই তখন লাল হয়ে যায়। এর সঙ্গে থাকে আরও কিছু উপসর্গ। যেমন চুলকানি, অস্বস্তি, ব্যথা, আলোক সংবেদনশীলতা, ঘন সাদাটে বা হলদেটে নিঃসরণ ইত্যাদি। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কনজাংটিভাইটিসের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস। তবে অ্যালার্জি, ঠান্ডা সর্দি বা চোখ কোনো রাসায়নিক বা ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে এলেও কনজাংটিভায় প্রদাহ হয় ও চোখ লাল দেখায়। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠায় পাতলা বর্ণহীন পানি পড়ে বেশি। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে নিঃসরণটি ঘন ও একটু হলদেটে হয়ে থাকে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
চোখের চারপাশে হালকা লাল রং হতে পারে। চোখের পাতা ফুলে যায়। চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে। চোখ থেকে পানি পড়তে পারে। চোখ থেকে ঘন হলুদ অথবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা জাতীয় পদার্থ বের হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের দুই পাতা লেগে থাকে।
নবজাতকের বেলায়
নবজাতকের চোখ ওঠা একটি বিশেষ বিষয়। ওষুধপত্র দিলেও নবজাতকের চোখ দুই-তিন দিন লাল অথবা ফোলা থাকতে পারে। যদি লালাভ রং এবং ফোলা দীর্ঘসময় ধরে থাকে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
কারণ
সংক্রমণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হতে পারে। তা ছাড়া সাধারণত ময়লা, ধুলোবালি দ্বারা অথবা কোনও কেমিক্যাল যেমন মেডিসিন, কিংবা সাজসজ্জার সময় প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
করণীয়
যে সব কারণে বিশেষত অ্যালার্জিক কোনও বস্তু, কেমিক্যাল কিংবা পরিবেশ দ্বারা চোখ ওঠে সে সব বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে।
শিশুর চোখ ওঠার ক্ষেত্রে
হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখের পাতাগুলো খোলা রাখতে হবে। বড় বাচ্চারা চোখে কালো চশমা পরতে পারে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
যখন আপনার শিশুর চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের তরল পদার্থ বের হয়। শিশু যখন চোখ ব্যথার কথা বলে। প্রচণ্ড সূর্যালোকেও চোখ ব্যথা করলে। যখন চোখে একদমই কিছু দেখতে পারে না অথবা পারলেও দেখতে সমস্যা হয়। যখন পরিবেশগত বিষয়ে কিংবা কোনও অ্যালার্জিক বস্তুর জন্য চোখে অসুবিধা অনুভব করে। শিশুর বয়স যদি ২ মাসের কম হয়। চোখের পাতা যদি ফুলে ওঠে কিংবা লাল হয়ে যায়।
বর্জনীয়
কোনও রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। শিশুকে জোর করে চোখ খুলতে বলা যাবে না।
জটিলতা
কর্নিয়ায় ঘা,কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকার
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস পরিবারের এক জনের থেকে অন্য জনের হতে পারে। সুতরাং এ সব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবার পৃথক কাপড়, তোয়ালে থাকতে হবে। পুরো হাত ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে। যে সব বিষয় শিশুর জন্য অ্যালার্জিক তা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।
চুল পড়া একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। নারীপুরুষ উভয়েরই এই সমস্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। বংশগত, পরিবেশগত, দুশ্চিন্তা ও পুষ্টিহীনতাসহ নানা কারণে চুল পড়তে পারে। প্রথম দিকে চুল কম পড়লেও আস্তে আস্তে চুল পড়ার হার অনেক বেড়ে যায়। তাই শুরু দিকে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে, চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। ফিজিওলজিক্যাল এলোপেসিয়ায় সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৫০/১০০টি চুল পড়ে যায়। এই পড়ার তুলনায় গজানোর পরিমাণ যদি কমে যায় তখন মাথার চুল কমতে শূরু করে। তবে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এন্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়ায় চুল পড়া সাধারণত বেশি দেখা যায়। ইহা সাধারণত মাথার নির্দিষ্ট কোনো একটি জায়গায় চুল পড়ে যায়। যেমন কপালের দুই সাইড থেকে অথবা মাথার মাঝখান থেকে যাহা সাধারণত এন্ড্রোজেনিক হরমোনের আধিক্যের কারণে হয়ে থাকে।
চুল উঠার/পড়ার কারণ
শতকরা ৯৫ ভাগচুল পড়ার কারণ জিনগত/ বংশগত ।এ কারণে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মাথার মাঝখানের ও কপালের দুই পাশের এবং মেয়েদের মাথার উপরিভাগের ওদু’পাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। খুস্কি তো চুলের বিশ্বস্ত শত্রু, চুল তো সে ফেলবেই। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা, স্টাইল করা ও রঙ করা চুলের জন্য ক্ষতিকর। থাইরয়েড হরমোনজনিত বালিভারের সমস্যাজনিত কারণেও চুল পড়তে পারে। কেমোথেরাপি নিলে চুল পড়ে যায়। মহিলাদের মেনোপজ হলে অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে চুল পড়ে। অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল করছেন ? সাবধান! এতেও কিন্তু চুল পড়ে। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জনিত ইনফেকশনের কারণে চুল কমে চুলের অযত্ন হলে সে কি আর থাকে মাথায়? কেমিক্যাল ব্যবহারেও চুল পড়ে। মানসিক চাপ চুলের উপরেও চাপ তৈরি করে পরিবারের কারো রিউমাটয়েড আথ্রাটিস, হাজল, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া ইত্যাদি রোগ থাকলে সেই পরিবারের লোকজনের চুল পড়া রোগও হতে পারে। রক্তস্বল্পতা, যেমনঃ আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা চুল পড়ার কারণ । বিভিন্ন রকমের রোগ যেমনঃ ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ যেমন- লুপাস, মূত্রনালীর প্রদাহ, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ইত্যাদি চুল পড়ার কারণ। নানা ধরনের ওষুধ যেমনঃ জন্মনিয়ন্ত্রিন পিল, এনটি ডিপ্রেসেন্ট, বিটা ব্লকার, কিছু এনএসএআইডি, ইমিউনো সাপ্রেসিভ এজেন্টস ইত্যাদি সেবন করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পড়ে যেতে পারে। হঠাৎ করে ওজন কমে যাচ্ছে ? চুলও কমে যেতে পারে। হজমের সমস্যায়ও চুল পড়তে দেখা যায়। প্রয়োজন মতো না ঘুমালে কিন্তু মাথায় চুল খুঁজে নাও পেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় চুল পড়তে পারে। বড় কোন অপারেশনের পর চুল পড়তে পারে। ভিটামিন ই কম খেলেও চুল কমতে পারে অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ খাবেন না, চুল কিন্তু পড়তে পারে। অতি কর্মব্যস্ততা চুল পড়ার অন্যতম কারণ। গরমে চুল পড়া বেড়ে যায়।
ভুল সংশোধন
লম্বা সময় টুপি পড়ে থাকলে চুল পড়া বাড়ে। শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে। লম্বা চুল চুলের গোড়ায় বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে। কালার বা কন্ডিশনিংয়ের কারণে চুল পড়ে। ম্যাসাজিং করে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। এগুলো কোনটাই সঠিক নয়।
প্রতিরোধ
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই চুল পড়া ঠেকানো সম্ভব। তবে সে জন্যে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে
চুলের গোড়ায় যেন জল না জমে। চুল এর গোড়াঘেমে গেলে তা তাড়াতাড়িশুকিয়ে ফেলুন। আপনার হেয়ার ড্রায়ার টি কুল ও লো সেটিংস এ রাখুন এবং ফ্ল্যাট আয়রন কম ব্যবহার করুন। একদিন বা দুই দিন পর পরমাথায় শ্যাম্পু দিন। আপনার চুলকে তার স্বাভাবিক রঙের চেয়ে এক বা দুই শেড এর বেশী রঙ করবেন না। নিজের পরিষ্কার ও শুকনো গামছা বাতোয়ালে দিয়ে মাথা মুছবেন। এক বা দুই সপ্তাহ পরপরবা কমপক্ষে মাসে একবার নিজের বালিশের কভার ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার চিড়নী দিয়ে চুল আচড়াবেন, তবে জোরে জোরে নয়। ভেজা চুল বাঁধবেন না, আঁচড়াবেন না, বেশি টানাটানিও করবেন না। খুব টেনে চুল বাঁধাও ভাল নয়। প্রতিদিন শাক-সবজি, মাছ, ফল, দুধ, ডিম, দই, পনির, ডালইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে খাবেন, খেয়াল রাখবেন যেন প্রতিদিনের খাবারে জিঙ্ক, ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, ফোলেট, ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। দোকানে চুল কাটালে বাসায় এসে শ্যাম্পু করবেন কিন্তু। যাদের মাথা শুষ্ক তারা মাথায় কন্ডিশনার ব্যবহার করলে ভালহয়। বৃষ্টিতে মাথা ভেজাবেন না। রাতেপ্রয়োজন মতো ঘুমাবেন। ঐ সব প্রসাধনী থেকে দূরে থাকুন যা আপনার মাথায় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে।
প্রতিকার
হ্যাঁ, আছে, অবশ্যই আছে, তবে চিকিৎসার আগে কারণটা নির্ণয় করতে হবে। নির্দিষ্ট কারণ শনাক্ত করা গেলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, চুল পড়া প্রতিরোধে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে।
টাক হওয়ার চিন্তায় মাথায় টাক না ফেলে আজ থেকে সতর্ক হয়ে যান, যত্ন নিন আপনার চুলের, প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করুন, আর যেন অতিরিক্ত হারে না পড়ে আপনার মূল্যবান চুল।
খুশকি ত্বকের বিশেষ একটি অবস্থাকে বুঝায়, যা মূলত মাথার খুলিতে বেশী দেখা যায়। এতে চর্মরেণু মাথার ত্বক থেকে আঁশের মত উঠে উঠে আসে, এবং ঝরে পড়ে। খুশকি আত্মসম্মানের এমনকি সামাজিক সমস্যাও তৈরী করতে পারে। এ অবস্থার আরও ভয়াবহ রূপ হলো সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ও চুলকানিপ্রবণ অবস্থা।
খুশকি আমাদের শরীরের অন্যতম একটি সমস্যা। খুশকি হলে মাথায় প্রচণ্ড চুলকানি সহ নিয়মিত চুল পড়তে পারে। মাথার ত্বক বা স্কাল্পে এক ধরণের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকে। চলুন জেনে নিই খুশকি হওয়ার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে।
খুশকির স্পষ্ট কোন কারণ জানা না গেলেও, ধারণা করা হয় জিনগত ও পরিবেশগত কারণে খুশকি হতে পারে। শীতকালে যেটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।খুশকির পেছনে কারণ হিশেবে অপরিচ্ছন্নতাকে দায়ী করা হলেও, মূলত তার সাথে এর সম্পর্ক নেই। ত্বকের কোষের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে খুশকি হয়ে থাকে। লক্ষণের উপর ভিত্তি করে খুশকির রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়।
মাথার ত্বক বা স্কাল্পে একটা সাধারণ চক্র হিসাবে সবসময় কিছু নতুন কোষ উৎপন্য হয় ও কিছু পুরনো কোষ ঝরে যায়। তবে যদি পুরনো মরা কোষ জমে যায় এবং সাদা আঁশের মতো গুঁড়া পড়তে থাকে এবং চুলকানি হয় যাকে আমরা খুশকি বলে থাকি। স্ক্যাল্পের শুষ্ক চামড়া যা ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরণের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণেই খুশকি হয়ে থাকে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে।
খুশকির কোন সাধারন প্রতিকার নেই। অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম বা স্যালিসিলিক অ্যাসিড ব্যবহার করে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের অর্ধেকই এ অবস্থার স্বীকার, যেখানে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে আক্রান্তর হার বেশী। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গার লোকই খুশকিতে আক্রান্ত হয়।
কারণ অনেক কারণেই খুশকি হতে পারে। খুশকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ বলা যেতে পারে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ও চুলকানিপ্রবণ অবস্থাকে।
এক ধরনের ছত্রাক আছে যার নাম মেলাসেজিয়া। সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার খুলিতেই এই মেলাসেজিয়া ছত্রাক থাকে। মেলাসেজিয়া নতুন ত্বক কোষ জন্মাতে সহায়তা করে। কিন্তু ত্বকে ময়লা জমে তেল চিটচিটে অবস্থার মধ্যে এই ছত্রাক বিপদে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় জন্মানো অতিরিক্ত ত্বক কোষগুলো মরে যায় এবং ঝরে পড়ে। মাথা থেকে ঝরে পড়া সাদা-হলদে খুশকি আসলে আমাদের ত্বকের মৃত কোষ। তবে, মাথা ছাড়াও বাহুমূল, ঊরুসন্ধিসহ শরীরের অন্যত্রও খুশকি হতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে খুশকি কোনো রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। মাথার লোমকূপে ময়লা জমে এবং ছত্রাকের প্রভাবে সাধারণত খুশকি হয়ে থাকে। নিম্নে খুশকি তৈরি হওয়ার কিছু অবস্থা বর্ণনা করা হলো।
১। শুষ্ক ত্বক
শীতের সময় আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে দেহের ত্বকের পাশাপাশি মাথার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে খুশকি বেশী হয়ে থাকে। এছাড়া এসময় বাইরের ঠান্ডা বাতাস ও ঘরের তুলনামূলক গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রার যে অসামাঞ্জস্যতা দেখা যায় সে কারণেও খুশকি হতে পারে। ২। চুল যথেষ্ট পরিমাণে না আঁচড়ানো
চুল যথেষ্ট পরিমাণে না আঁচড়ালেও খুশকি হতে পারে। যদি চুল কম আঁচড়ানো হয় তাহলে মাথার ত্বকের চামড়ার ঝরে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। ফলে মাথায় খুশকির সৃষ্টি হয়।
৩। মাথায় অতিরিক্ত তৈল ব্যাবহার
যারা মাথায় অতিরিক্ত তৈল ব্যবহার করে তাদের খুশকির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ব্যবহার করা তেল স্তুপ আকারে চুলের গোড়ায় জমা হয়ে পরবর্তীতে সেখানে ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব ঘটে যার ফলে মাথায় খুশকির পরিমান বেড়ে যায়।
৪। শ্বেত প্রদর জাতীয় অসুখে আক্রান্ত হলে
ঈস্ট জাতীয় ( শ্বেত প্রদর জাতীয় ) অসুখ বা এলার্জির সমস্যা আছে এরুপ ব্যক্তিদের খুশকির প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায়। মহিলাদের এ সমস্যা বেশী পরিলক্ষিত হয়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ও ঈস্ট কাউন্টারএক্ট করে ও খুশকি হওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে।
৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা
যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা হয় তাহলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে। এর ফলেও মাথায় খুশকির উৎপত্তি হতে পারে।
৬। সঠিক খাদ্যাভাসের অভাব
সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবও খুশকির অন্যতম কারণ। যদি গৃহীত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ও জিংক না থাকে তাহলেও খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলেও খুশকি হতে পারে।
৭। ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
সকলের স্ক্যাল্পেই ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরণের ফাঙ্গাস অল্প পরিমাণে থাকে এবং তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসটির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা ত্বকের ক্ষরিত তেল শোষণ করে নেয়। এর ফলে স্ক্যাল্প অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উৎপাদন করে থাকে। এ সকল অতিরিক্ত কোষ মৃত হলে স্ক্যাল্প ও চুলের তেলের সাথে মিশে খুশকির সৃষ্টি করে।
৮। অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অতিরিক্ত মানসিক চাপও খুশকির একটি অন্যতম কারণ। যারা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকেন তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
৯। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুশকি বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া বিশেষ কিছু রোগ যেমন- পারকিন্সন ডিসিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সেন্সিটিভ ত্বক ও ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা) ইত্যাদি যাদের রয়েছে তাদেরও খুশকির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কিছুদিন আগের একটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে ১০.৬% মানুষ যাদের এইচ.আই.ভি আছে তাদের খুশকির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
১০। পানির সমস্যার কারণে
অনেকসময় পানির সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে। যদি পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ত্বক তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায় যা মাথায় খুশকির কারণ হয়ে ওঠতে পারে।
প্রতিরোধে করনীয়:
১। শ্যাম্পু ব্যবহার
যাঁদের প্রায়ই খুশকি হয় তাঁরা নিয়মিত চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
২। মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার
বাইরে বের হলে ধুলোবালি মাথায় জমে খুশকির প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সমস্যা দূর করতে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। এজন্য মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া সহ চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
খুশকিমুক্ত চুলের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। চুল অপরিষ্কার থাকলেই খুশকি বেশি হয়। তাই নিয়মিত চূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
৫। ভেজা চূল জলদি শুকিয়ে নেওয়া
ভেজা অবস্থায় চুল বেঁধে রাখা ঠিক নয়। এজন্য গোছলের পর যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালো করে মুছে নিতে হবে। প্রয়োজনে ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিতে হবে। এছাড়া চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নেওয়া ভালো।
খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করা দরকার। নইলে এই সমস্যা থেকে চুলপড়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই খুশকি প্রতিরোধে শ্যম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবারের বিষয়েও সমান মনযোগী হওয়া প্রয়োজন।
ব্রণ (Acne vulgaris বা Acne) হচ্ছে আমাদের শরীরের ত্বকের ফলিকলের এক প্রকার দীর্ঘমেয়াদী রোগ। সাধারণত মুখমন্ডল, গলা, বুক, পিঠের উপরিভাগ এবং হাতের উপরিভাগে এই রোগটা হয়ে থাকে। এসব স্থানে ছোট ছোট দানা, ছোট ছোট ফোড়া, সিস্ট এমনকি নোডিউল হতে পারে। এ রোগটা সাধারণত মুখমন্ডলেই বেশি হয় বিশেষ করে গালে, নাকে, কপালে এবং থুতনিতে সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে।
বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন টেস্ট্রোরেন আর প্রোজেস্ট্রোরেনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি অধিক হারে তেল নিঃসরণ শুরু করে। কোনো কারণে সিবেসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণের বাধার সৃষ্টি হয় এবং তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে যা ব্রণ (Acne) নামে পরিচিত। এর উপর জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে পুঁজ তৈরি হয়। অনেক সময় বাইরে থেকে এদের ছোট দেখালেও এরা বেশ গভীর হতে পারে। এজন্য ব্রণের সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে কাল দাগ থেকে যেতে পারে। সাধারণত ১৩ বছর বয়স থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত শতকরা ৯০ জনের এ রোগটি কমবেশি হয়ে থাকে। ২০ বছর বয়সের পর থেকে এ রোগের প্রকোপ কমতে থাকে। আবার কখনও কখনও ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সেও এটি হতে পারে এবং অনেক বয়স পর্যন্ত থাকতে পারে।
ব্রণ কেন হয়? ব্রণের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ জানা না গেলেও সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে, বংশগত কারণে, হজমের গোলমাল হলে, মদ্যপান ইত্যাদি কারণে ব্রন হতে পারে। ব্রণ আমাদের শরীরের ত্বকের ফলিকলের এক প্রকার দীর্ঘ-মেয়াদী রোগ। বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন টেস্ট্রোরেন ও প্রোজেস্ট্রোরেনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি অধিক হারে তেল নিঃসরণ শুরু করে। এই তেল বেরিয়ে আসার পথটি ক্রটিযুক্ত থাকায় তেল গ্রন্থির ভিতরে জমতে শুরু করে। এক সময় গ্রন্থিটা ফেটে যায় এবং তেল আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন, ব্যাকটেরিয়া তেলকে ভেঙে টিস্যুতে ফ্যাটি এসিড উৎপাদন করে। এই ফ্যাটি এসিড ত্বকের ভেতরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, ফলে চামড়ার মধ্যে দানার সৃষ্টি হয়। এটাই ব্রণ নামে পরিচিত। সাধারনত গলা, বুকে ও পিঠের উপরিভাগ, হাতের উপরিভাগে এবং বিশেষ করে মুখমন্ডলে এই রোগটা বেশি হয়। এসব জায়গায় ছোট ছোট দানা, ফোড়া, সিস্ট অথবা নোডিউল হতে পারে।
ব্রণ কি? কেন হয়? করনীয় ও চিকিৎসা
ব্রণের প্রকারভেদ
ট্রপিক্যাল একনি যা অতিরিক্ত গরম এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে পিঠে এবং উরুতে হয়ে থাকে। প্রিমিন্সট্রুয়াল একনি যা সাধারণত মহিলাদের মাসিকের সাপ্তাহ খানেক আগে মুখে হতে দেখা দেয়। একনি কসমেটিকা যা কোনো কোনো প্রসাধনী দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে হতে পারে। একনি ডিটারজিনেকস যা অধিক হারে মুখে সাবানের ব্যবহারের ফলে হতে পারে। স্টেরয়েড একনি যা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনে হতে পারে। এ ঔষুধ একাধারে অনেকদিন ব্যবহারের ফলে ব্রণের পরিমান আরও বেড়ে যেতে পারে। কাদের বেশী হয় বয়ঃসন্ধিকালে এ রোগটা বেশী হয়। ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে এ রোগে ভোগে। ২০ বছর বয়সের পর সাধারণত এ রোগটা কমে আসে। তবে কিছু কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত এ রোগ দেখা যায়।
ব্রণ থেকে মুক্তির উপায় কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই ব্রণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যদিও কোনো বিশেষ খাবারের কারনে ব্রণ হয় না কিন্তু যদি কোনো খাবার খেলে ব্রণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় থাকে তবে সে খাবারটি বাদ দিতে হবে। প্রচুর ফলমূল ও পানি খেতে হবে। মুখে ব্রণ থাকলে কোন রাসায়নিক উপাদান বা কসমেটিকস ব্যবহার করা উচিত নয়, অবশ্যই প্রাকৃতিক বা হারবাল জিনিস ব্যবহার করতে হবে।
ব্রণ হলে করনীয়
দিনে ২ থেকে ৩ বার হালকা সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে ভাল করে মুখ ধূতে হবে। কখনোই ব্রণে হাত দেয়া যাবে না। ত্বকে তেল আছে এমন কোন কসমেটিকস বা মেকআপ ব্যবহার করা যাবে না। মাথা খুশকিমুক্ত রাখতে হবে। অন্যের তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশী করে খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফল ও পানি পান করুন। ঝাল, মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। ব্রণ হলে একেবারেই আচার খাবেন না তবে মিষ্টি চাটনি খাওয়া যেতে পারে। তেলযুক্ত ক্রিম অথবা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা যাবে না। চুলে এমন ভাবে তেল দেবেন না যাতে মুখটাও তেল তেলে হয়ে যায়। অতিরিক্ত রাগ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বেশি পরিমাণে নিরামিষ খাবার খান অপরদিকে আমিষ খাবার যতটা সম্ভব না খাওয়ার চেষ্টা করুন। ডেইরি প্রোডাক্টসের মধ্যে হরমোনাল উপাদান খুব বেশি পরিমাণে থাকে বলে তা খুব সহজে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ কারণে পনির, দুধ এবং দই কম খেতে হবে। কোল ড্রিঙ্কস একেবারেই খাওয়া যাবে না। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। রোদে বের হবেন না, রৌদ্র এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
অধিক পরিমানে শাক-সব্জি খেতে হবে। মুখের তৈলাক্ততা কমাতে হবে। তৈলাক্ততা কমানোর জন্য সাবান দিয়ে দিনে কয়েকবার মুখ ধুতে হবে। তৈলাক্ত খাবার, ঝাল, ভাজাপোড়া, চকলেট, আইসক্রিম ও ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে। ব্রণ একবার হয়ে গেলে খোঁটা যাবে না, খুঁটলে গর্ত হয়ে যাবে। আবার, হাত আর নখ থেকে জীবাণু বেয়ে ব্রণকে আক্রান্ত করে এবং ব্রণটা ফোঁড়ায় রূপান্তরিত হয়। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে হবে, সেটাও বারবার ধুয়ে পরিস্কার করে রাখতে হবে। ব্রন পেকে গেলে অথবা বেশী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ফর্সা হওয়ার জন্য আর ব্রণের প্রতিকার হিসেবে স্টেরয়েড অয়েনমেন্ট কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। এতে চামড়ার ক্ষতি হয় এবং স্টেরয়েড অয়েনমেন্টের ব্যবহার উল্টো ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে। ব্রণের জন্য ত্বকে যে গর্ত হয়, তা দূর করার জন্য ভাল ব্যবস্থা এখন এদেশেই আছে। এর মধ্যে পাঞ্চ স্কাররিমুভার, ডার্মাব্রেশন, স্কার এলিভেশন ইত্যাদি পদ্ধতিতে গর্ত আর দাগ দূর করে মুখের ত্বক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
ব্রণের কালো-দাগ দূর করার উপায়ঃ অনেকেরই মুখে দেখা যায় ব্রণ ও কালো ছোপ ছোপ দাগ। এ জাতীয় ব্রণ ও কালো দাগ হলে প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। ত্বকের ক্ষেত্রে অবহেলার ফল মারাত্নক হতে পারে। আর নষ্ট করে দিতে পারে আপনার সুন্দর চেহারার সৌন্দর্য মুখের এসব কালো দাগ ও ব্রণ দূর করার জন্য বাড়তি একটু পরিচর্যা দরকার আরও কিছু টিপস নীচে দেওয়া হলঃ
ব্রণের দাগ ও ব্রণের উপর লবঙ্গ বেটে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখবেন। ১ দিন পর পর টানা ১ মাস এভাবে লাগালে দাগ কমে যাবে। লবঙ্গে ঝাঁঝ থাকে বলে লাগানোর প্রথম ৫-৭ মিনিট ত্বক জ্বলবে, কিন্তু এতে ঘাবড়িয়ে যাবেন না। কিছুক্ষণ পর জ্বলা ঠিক হয়ে যাবে। প্রতিবার ই এমন হবে। লবঙ্গ বাটার সময় এতে একটু পানি মিশিয়ে নিবেন। ২ চামচ বেসন, ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ চা চামচ কমলার খোসা বাটা একসাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এবার এটা মুখে ঘাড়ে মাখিয়ে রেখে ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপেল এবং কমলার খোসা একসাথে বেটে এর সাথে ১ চামচ দুধ, ডিমের সাদা অংশ এবং কমলার রস মেশান। এবার মিশ্রনটা ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। পাকা পেঁপের শাঁস মুখে মেখে নিন। ১ চামচ পাকা পেঁপের শাঁস ও ১ চামচ শশার রস মুখে মেখে নিন। ত্বক উজ্জ্বল হবে। একটি ডিম, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, একটি গোটা লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন, এটি নখ, গলা, হাত ও ঘাড়ের কালো ছোপে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের দাগ, হাত, ঘাড়ের কালো ছোপ ইত্যাদি সেরে যাবে। ২ চা চামচ চিনা বাদাম বাটা, ২ চা চামচ দুধের সর মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ মিলিয়ে যাবে।
সবশেষে বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণ সবচেয়ে বেশি হয়, পাশ্চাত্যে যার পরিমাণ শতকরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। গ্রামে এ রোগের মাত্রা অনেক কম। সাধারণত সময়ের সাথে সাথে অধিকাংশ মানুষেরই ব্রণ কমে যায় এবং ২৫ বছরের মধ্যে প্রায় নির্মুল হয়ে যায়। কিছু কিছু মানুষের ৩০ থেকে ৪০ বছরের পরেও ব্রণ থাকতে পারে।
মাথাব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে এক প্রকারের মাথাব্যথা হলো ‘মাইগ্রেন।’ গ্রামদেশে যা সাধারণভাবে ‘আধ কপালি ব্যথা’ বলে পরিচিত। বস্তুত আজ থেকে পনের/বিশ বছর পূর্বে এই রোগের তেমন একটা প্রাদুর্ভাব ছিল না। কিন্তু সময়ের কালস্রোতে প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর ব্যাপকতাও ভীষণভাবে প্রসারিত হয়েছে। ঢাকা শহরের মতো জনবহুল, ধুলাবালি ও ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশের ন্যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মূলত এর প্রকোপ একটু বেশি লক্ষণীয়। যাহোক, এই মাইগ্রেন রোগটি বর্তমানে ধীরে ধীরে এত বেশি বিস্তৃতি লাভ করেছে যে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এর রূপ আরও ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং এর নানাবিধ দিক ও প্রতিকার সম্পর্কে এবং সর্বোপরি এই রোগের বিষয়ে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যেসব চিন্তা-ভাবনা করছেন তার উপর বিশদ ধারণা আমাদের জানা প্রয়োজন।
মাইগ্রেনের কারণ বাস্তবিকপক্ষে মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আজও কোনো স্থির সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা ১৯৬০ সালে মাথাধরা সম্পর্কিত এক গবেষণায় জানান, টেনশনের কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হয় এবং তার চিকিৎসাও সহজ। রক্তবাহী শিরাগুলো যখন মস্তিষ্কে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ করে না, তখন সেটাকে অনেকে মাইগ্রেনের ব্যথা হিসেবে চিহ্নিত করেন। টেনশন বা অন্য কারণেও এটা হতে পারে। তাছাড়া রক্তবাহী শিরাগুলো কখনও কোনো কারণে অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহ করলে মাথাব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা মাইগ্রেনের ব্যথার চেয়ে তীব্র; তবে তা মাইগ্রেনের ব্যথার সাথে বুঝতে ভুল হতে পারে।
ধারণা করা হয়, টেনশন বা প্রাকৃতিক কারণ থেকে সৃষ্ট মাইগ্রেনের ব্যথার প্রারম্ভে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়- যার কিছুটা প্রভাব পড়ে অক্সিপিটাল এবং প্যারাইটাল নামক মস্তিষ্কের দুটি অংশের কার্যকারিতার উপর। ফলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মাথাব্যথার সৃষ্টি হতে শুরু করে। আবার যখন পুরোপুরিভাবে মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়, তখন বহিঃমস্তিষ্কের ধমনিগুলোর প্রসারণ ঘটে- যা মূলত রক্তের মাঝে বিদ্যমান ৫-হাইড্রেক্সি ট্রিপটামিন (৫-Hydroxy Tryptamine) নামক ব্রেনের উপাদানের উপস্থিতির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। তবে এই উপাদানটির সঠিক ভূমিকা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও সন্দিহান। বর্তমানে আমেরিকার ‘Association For the Study of Headache’ মাথাব্যথা তথা মাইগ্রেনের সঠিক কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করার লক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধান কারণ ক) বংশগত প্রভাব : অন্যান্য ব্যথার তুলনায় মাইগ্রেনের ব্যথার উপর বংশগত প্রভাব বেশি- যা মূলত কোষের একক ‘জীন’-এর বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। প্রমাণ স্বরূপ, নেদারল্যান্ডের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির একদল নিউরোলজিস্ট একজন মাইগ্রেন রোগীর দেহ থেকে মাইগ্রেনের সাথে সংশ্লিষ্ট জীন পৃথক করেন। পরবর্তীতে ঐ রোগীর মাইগ্রেনের ব্যথা আর দেখা যায়নি। সেই গবেষক দলের নেতা ডা. মাইকেল ফেরি ১০টি পরিবারের ৬০ জন সদস্যের উপর গবেষণা চালিয়ে একই তথ্য প্রকাশ করেন।
খ) টেনশন/ দুশ্চিন্তা/ অস্থিরতা : যারা সবসময় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে চিন্তাগ্রস্ত থাকেন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের মাঝে এর প্রকোপ বেশি। তাছাড়া হঠাৎ করে কোনো বিপজ্জনক খবর বা আবেগপ্রবণ অবস্থা এই মাইগ্রেনের জন্ম দেয়।
গ) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং কিছু যৌন হরমোন : গবেষকদের মতে মাথাব্যথার সাথে নির্দিষ্ট কিছু যৌন হরমোনের সংযোগ রয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি। অপরদিকে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের একদল গবেষক ১০০ জন মহিলার উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, যাদের নিয়মিত মাসিক হয় না তাদের এই মাইগ্রেনের হার বেশি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাসিকের পূর্বাবস্থায় এই মাইগ্রেনের ব্যথা উঠতে পারে। অন্যদিকে যেসব মহিলা দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন তাদের মাঝেও এই রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
ঘ) পরিবেশের প্রভাব : বর্তমানে আমাদের দেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহরে ক্রমাগত জনসংখ্যার বৃদ্ধি পরিবেশকে অসহনীয় করে তুলছে। এরই মাঝে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন কর্তৃক বর্জ্য পদার্থ ও ধোঁয়া পরিবেশকে এমন এক অবস্থায় এনেছে যার প্রভাব আমাদের শরীরের উপর পড়ছে। আর এমনি এক প্রভাবের কারণ হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে মাইগ্রেন। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গ্রাম অঞ্চলের লোকদের চেয়ে শহর অঞ্চলের লোকদের মাঝে এর প্রভাব বেশি।
প্রভাবিত করে এমন কারণ প্রথমত, কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা গ্রহণের পর মাইগ্রেনের ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় বা হালকা ব্যথার ভাব থাকলে তা পরিপূর্ণ মাইগ্রেনের ব্যথায় রূপ লাভ করে। তার মাঝে নিম্নলিখিত খাবার উল্লেখযোগ্য : (১) চকোলেট (২) পনির (৩) মদ্যপান (৪) কোলাজাতীয় পানীয়।
দ্বিতীয়ত, মাইগ্রেন রোগী কিন্তু পাশাপাশি সাইনাসসমূহের প্রদাহে ভুগছেন বা প্রচন্ড সর্দি কাশি বা ঠান্ডায় ভুগছেন; তাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ব্যথার প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয়ত, যখন প্রচন্ড গরম পড়ে এবং পরিবেশের অবস্থা ভ্যাপসা আকার ধারণ করে, তখন মাইগ্রেনের রোগীর মাথাব্যথার প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে শীতকালে যদি ঠান্ডা বাতাস বেশি লাগে বা কুয়াশা পরিবেষ্টিত অবস্থা বিরাজ করে তখন এর প্রকোপ আরো বেড়ে যায়।
প্রকারভেদ মাইগ্রেন সাধারণভাবে তিন প্রকার হয়। যথা- ক) মাইগ্রেন উইথ অরা বা ক্লাসিক মাইগ্রেন; খ) মাইগ্রেন উইথ আউট অরা বা কমন মাইগ্রেন; গ) মাইগ্রেন ভ্যারিয়েন্স অ্যাটিপিক্যাল মাইগ্রেন।
মাইগ্রেনের লক্ষণ অরা (Aura) বা প্রাক ইঙ্গিত মাইগ্রেন হচ্ছে মাইগ্রেন মাথাব্যথা শুরুর পূর্বের ত্রিশ মিনিটের মধ্যে কিছু বিশেষ অনুভূতির প্রমাণ।একটি মাইগ্রেন মাথাব্যথার আক্রমণকে কয়েক পর্যায়ে ভাগ করা যায়; (ক) প্রডরমাল (prodormal) বা প্রাকউপসর্গ যা মাথাব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পূর্বে লক্ষ্য করা যায়। (খ) অরা বা পূর্ব লক্ষণ যা মাথাব্যথা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে হয়। (গ) মূল মাথাব্যথা, (ঘ) পরবর্তী উপসর্গ বা পোস্টড্ররমাল পর্যায়ে যদিও অধিকাংশ রোগী একাধিক পর্যায়ে ভুগে থাকে। তবে কোনো একটি সময় রোগ নির্ণয়ের জন্যও অপরিহার্য নয়।
পূর্ব লক্ষণ : মাথাব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন আগে শতকরা ৫০-৮০ ভাগ মাইগ্রেন রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু মানসিক, স্নায়ুবিক, অটোনমিক (autonomic) ও অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায়। এদের কেউ কেউ বিষন্ন, উল্লসিত, ঝিমুনি, অতি সচেতন, অতি উৎসাহী কিংবা খিটখিটে, শান্ত ধীরগতিভাবে ভুগে থাকে। কারও মধ্যে বমি বমি ভাব, হাই ওঠা, ক্ষুধামন্দা, পিপাসা ইত্যাদি দেখা যায়। কখনও কখনও কিছু খাবার-এর প্রতি আগ্রহ দেখা যায় যেগুলো সাধারণত খাওয়া হয় না। তবে অনেকেই এ লক্ষণগুলো বুঝতেই পারে না। পূর্ব লক্ষণগুলো মাইগ্রেন রোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরবর্তী লক্ষণ (Postdrom)
মাইগ্রেন মাথাব্যথার পরবর্তী পর্যায়ে রোগী সাধারণত ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন যেন বিশাল একটা শারীরিক পরিশ্রমের ধকল গেছে। উপরন্তু এ সময়ে তিনি কোনো কিছু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করতে পারেন না। বমি বমি ভাব, খাদ্যে অরুচি, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা ইত্যাদি দু-একদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে এগুলো এত তীব্র হয় না বলে চিকিৎসাও দরকার পড়ে না।
অরা-বিহীন মাইগ্রেন (Migraine without Aura) এটাকে কমন মাইগ্রেনও বলা হয়। অরাযুক্ত মাইগ্রেন এর চেয়ে এর প্রকোপ অনেক বেশি। এ মাথাব্যথা ৪-৭২ ঘণ্টাব্যাপী হয় এবং কমপক্ষে নিচের যে কোনো দুটি লক্ষণ থাকতে পারে। ক) চিন চিন বা দপ দপ করে ব্যথা; খ) অর্ধেক মাথায় ব্যথা; গ) বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া; ঘ) আলো ভীতি বা শব্দ ভীতি; ঙ) অতীতে এ ধরনের মাথাব্যথার কমপক্ষে পাঁচবার অভিজ্ঞতা ও কোনো মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রোগ না থাকা; চ) অরা-যুক্ত মাইগ্রেন (Migrane with Aura) কমপক্ষে শতকরা পনেরো ভাগ মাইগ্রেন রোগী তাদের মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ অনুযায়ী আসন্ন মাথাব্যথার আক্রমণ বুঝতে পারে। সাধারণত এ রোগীরা মাথাব্যথা শুরুর পূর্বের আধাঘণ্টা সময়ের মধ্যে চোখে আলোর ঝলকানি, চোখের সামনের কিছু অংশ অন্ধকার দেখা, রাস্তাঘাট উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা দেখা ইত্যাদি দেখতে পান। কোনো কোনো সময়ে রোগী শরীরের অংশ বিশেষ অনুভূতির অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন। কারো কারো কিছুক্ষণের জন্য শরীরের অংশ বিশেষ অবশ, কথা বলার অস্বাভাবিকতাও হতে পারে।
মাইগ্রেন প্রতিরোধের উপায় ক) মাইগ্রেন নিয়মিত চিকিৎসায় সেরে ওঠে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। খ) প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ও পরিমিত ঘুম দরকার। গ) অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা। ঘ) বেশি রোদ বা ঠান্ডা পরিহার করা। ঙ) উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা। চ) বেশি সময় ধরে মোবাইল। কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা। ছ) মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত। জ) এছাড়া খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন আনা উচিত। কিছু খাবার গ্রহণ করলে মাইগ্রেন এর প্রতিরোধ হয়, যেমন – ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি), বিভিন্ন ফল (বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর), সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি, ইত্যাদি। ঝ) কিছু খাবার এড়িয়ে চললে মাইগ্রেনের ব্যথার সম্ভবনা কম হয়, যেমন – চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল , গম জাতীয় খাবার (যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ) ইত্যাদি।
নাকের পলিপ প্রচলিত একটি রোগ। এলার্জির কারণে সাধারণত নাকের পলিপ হয়। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না নিলে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
নাকের পলিপ হলো দীর্ঘ মেয়াদি এলার্জি। নাকের যদি এলার্জি হয় বা সংক্রমণ হয়, এটি হতে হতে নাকের যে ঝিল্লি আছে, মিউকাস মেমব্রেন আমরা বলি, এর মধ্যে পানি জমে যায়। পানি হয়ে অনেকটা আঙ্গুর ফলের মতো ফুলে যায়। ফুলে নাকের ভেতরে চলে আসে।একে বলা হয় নাকের পলিপ।
তবে নাকের পাশে তিনটি মাংসের পিণ্ড রয়েছে। একটিকে বলি ইনফিরিয়র টার্মিনেট, অন্য দুটিকে মিডেল টার্মিনেট ও সুপিরিয়র টার্মিনেট বলি। ইনফিরিয়র টার্মিনেট দুই পাশে বড়। এই ইনফিরিয়র টার্মিনেটকে পলিপ বলে বিভিন্ন অপচিকিৎসা করা হয়। একটি স্বাভাবিক অংশকে পলিপ হিসেবে ধরে নেয়। তবে পলিপ আসলে সেটি নয়।
কীভাবে বুঝবেন তাঁর নাকে পলিপ হয়েছে? তার নাক বন্ধ থাকবে। তার দীর্ঘমেয়াদি নাক দিয়ে পানি আসবে। নাকে এলার্জি থাকবে বা নাকে সংক্রমণ থাকবে। ক্রমান্বয়ে নাক বন্ধ থাকবে। একদিকে অথবা দুই দিকেই নাক বন্ধ হয়ে যাবে। মাথা ব্যথা করবে। সেটি অনেকদিন ধরে হতে পারে। তখনই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে এলে সেটি তিনি দেখবেন।
পলিপের দুই রকম ভাগ আছে। একটি হলো ইথময়েডাল পলিপ। আরেকটি হলো, অ্যানথ্রোকরনাল পলিপ। নাকের দুই পাশে যে সাইনাস আছে। ইথময়েডাল সাইনাসে দেখা যায়, নাকের ওপর থেকে উঠে নিচের দিকে পলিপগুলো আসে এবং এলার্জি যাদের বেশি তাদের বেশি হয়। দুই পাশে অনেকগুলো হয়।
সাধারণত বয়স্ক লোকদের এসব বেশি হয়। আর অ্যানথ্রোকরনাল যেটা, মেক্সিলারি সাইনাস থেকে নাকে ডান বা বাম পাশে উঠে নাকের পেছনে চলে যায়। এটা একদিকে হয় এবং একটাই হয়। এটা তরুণ বয়সেও হতে পারে।
এটি আসলে দেখলেই বোঝা যায়। পলিপটা হবে সাদা, আঙ্গুর ফলের মতো। এটা যদি আমরা কিছু দিয়ে স্পর্শ করি এর কোনো সেন্স থাকবে না। টার্মিনেট হবে একটু লালচে, এটা লেটারাল ওয়ালের সাথে লাগানো থাকবে। আর পলিপের চারপাশে দেখা যায় ঝুলন্ত।
আর টার্মিনেট স্পর্শ করলে সাথে সাথে হাঁচি উঠবে। এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। পাশাপাশি এক্স-রে রয়েছে। আজকাল এন্ডোস্কোপি করা হয়। আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে দেখতে পাই। এমনকি রোগীকে দেখিয়ে দেই।
একবার অস্ত্রোপচার করলে আবার পলিপ হয় কি না? তখন বারবার অস্ত্রোপচার করতে হয় কি না? এই প্রশ্নটি নাকের বেলায় সবাই করে। যেকোনো রোগী একবার অস্ত্রোপচার করার পর আবার করতে হতে পারে। পলিপ আবার হতে পারে। যেকোনো রোগও আবার হতে পারে। জ্বর হলেও আবার হতে পারে। মাথা ব্যথা হলেও আবার হতে পারে।ডায়রিয়া হলেও আবার হতে পারে। স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হলেও আবার হতে পারে। প্রতিটা রোগই তো আবার হতে পারে। তাই নাকের বেলায়ও হতে পারে।
সময় মতো যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া না হয় তাহলে কী জটিলতা হতে পারে? পলিপ হলে খাবারের সময় স্বাদ পাবে না। এটি মস্তিস্কের দিকে যেতে পারে। সংক্রমণ হতে পারে। মস্তিস্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় নাকের পেছন দিয়ে তালুর পেছনে, গলায় ঝুলতে পারে। তখন খেতে অসুবিধা হয়।
প্রতিরোধের উপায় প্রতিরোধ হলো অ্যালার্জি যাদের আছে, তাদের এটি এড়িয়ে যেতে হবে। কী কারণে এলার্জি হচ্ছে, সেটি এড়িয়ে যেতে হবে। আর এলার্জি যদি বেশি হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর চিকিৎসা নিতে হবে।
স্টেরয়েড স্প্রে আছে, মন্টিলুকাস আছে-এগুলো দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। যাদের তীব্র এলার্জি আছে, তাদের নাকে যেন সংক্রমণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আর পলিপ হবে না।
নাকের যত্ন কীভাবে নিতে হবে? প্রথমত নাক পরিষ্কার করা ভালো। তবে খুব জোরে নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নাকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। কাজ করার পর হাতমুখ ধুয়ে নেব, নাকও পরিষ্কার করে নেব। এলার্জি যাদের আছে, তাদের আগে বুঝতে হবে কিসে এলার্জি হচ্ছে।
ঘরের ধুলাবালি, বাইরের ধুলাবালি, খাবার, সিনথেটিক কাপড়, পারফিউম, ফুলের রেণু, কসমেটিক, পরিবেশ দূষণ এগুলো থেকে এলার্জি হতে পারে। সেই দিকটি অবশ্যই মাথায় রেখে সেভাবেই সতর্ক হয়ে চলতে হবে।
অ্যাজমা বা হাঁপানি মূলত শ্বাসনালির প্রদাহজনিত একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই প্রদাহের ফলস্বরূপ শ্বাসনালি ফুলে যায় এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হাঁপানির বিভিন্ন উপসর্গ (যেমন— শ্বাস-কষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া ইত্যাদি) দেখা যায়। সঠিক সময়ে ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে এ উপসর্গগুলো সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হাঁপানি কেন হয়? এবং হাঁপানি রোগের লক্ষণসমূহ
হাঁপানি রোগের কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি এবং এ রোগের জন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণকেও এককভাবে দায়ী করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত বা পরিবেশগত কারণে এ রোগ হতে পারে। কারও নিকটাত্মীয় যদি এ রোগে আক্রান্ত থাকে অথবা কারও যদি বিভিন্ন দ্রব্যের প্রতি অতিমাত্রায় অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তার এ রোগ হতে পারে। এ ছাড়াও শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হলে এ রোগ হতে পারে।
অ্যাজমা বা হাঁপানি হওয়ার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। এটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগও নয়। প্রদাহের ফলে শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, ফলস্বরূপ ঘন ঘন কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হওয়া, শোঁ শোঁ আওয়াজ, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সঠিকভাবে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিলে অনেক সময় এ রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ধুলোবালির মধ্যে থাকা মাইট নামক একধরনের ক্ষুদ্র কীট, ফুলের পরাগরেণু, পাখির পালক, ছত্রাক, ইস্ট এবং সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে থাকেন তাদের এ রোগ হতে পারে। ধূমপান শুধু শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণই নয়, বহুক্ষেত্রে এটা হাঁপানির তীব্রতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়, হাঁপানির ঔষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ধূমপান ফুসফুসের কার্যক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ীভাবে কমিয়ে দেয়।
পেশাগত কারণেও কখনো কখনো এ রোগটি হতে পারে। কিছু উত্তেজক উপাদান (যেমন- শ্বাসনালির সংক্রমণ, অ্যালার্জি জাতীয় কোন বস্তুর সংস্পর্শ, ধুলা, বায়ুদূষণ, সিগারেটের ধোঁয়া ইত্যাদি) অনেক সময় অতি সংবেদনশীল রোগীর শ্বাসকষ্টের কারন হতে পারে।
কিছু ওষুধ, যেমন বিটা ব্লকার (উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ওষুধটি ব্যাবহার করা হয়), এন এস এ আই ডি (ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যাবহার করা হয়), এসপিরিন ইত্যাদি ওষুধের কারনেও হাঁপানি হতে পারে।
মানসিক চাপও অনেক ক্ষেত্রে হাঁপানির তীব্রতা বাড়াতে পারে।
কারও কারও গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, হাঁসের ডিম, পুঁইশাক, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, ইত্যাদি খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা আছে, খেলে চুলকায় অথবা নাক দিয়ে পানি পড়ে। তবে সাধারনভাবে খাবারের মাধ্যমে যে অ্যালার্জি হয় তাতে খুব কম সংখ্যক মানুষেরই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কারও কারও আবার নানান রকম সুগন্ধি, মশার কয়েল বা কীটনাশকের গন্ধের কারনেও শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেতে পারে।
রোগ নির্ণয়
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের প্রধান লক্ষণগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া এবং অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। হাঁপানি বা অ্যাজমা নির্ণয়ের প্রথম ধাপে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগীর মুখে রোগের বিস্তারিত ইতিহাস জেনে সিদ্ধান্ত নেবেন। সাধারণত এ উপসর্গগুলো রাতে বা সকাল সকাল বেশি অনুভূত হয় এবং শ্বাসনালীতে কোনো ধরনের অ্যালজেন প্রবাহ প্রবেশ করার ফলে অথবা অল্প-মাত্রায় পরিবর্তনের কারনে এ লক্ষণসমূহের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বা কাশি শুরুর আগে নাক চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, হাঁচি হয়, চোখ লাল হয়ে যায়। ওপরের উপসর্গসমূহের সঙ্গে বংশে কারও হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে ধরে নেওয়া হয় যে তারও হাঁপানি রয়েছে।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে বা প্রতিরোধে রোগীর ভূমিকা
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রোগীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। রোগীকে অ্যাজমা বা হাঁপানি সম্পর্কে, রোগের প্রকৃতি, চিকিৎসা, ইনহেলারের কাজ, ইনহেলার কখন ও কিভাবে ব্যবহার করবেন এই বিষয়ে ভালভাবে জানতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগীকে সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহার করতে জানতে হবে।
কি ধরনের চিকিৎসা তার প্রয়োজন, তার হাঁপানির উপসর্গ কখন বৃদ্ধি পায়, কখন ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে, রোগটি তার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে না বাইরে চলে যাচ্ছে এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সেই বিষয়ে রোগীর বিস্তারিত ধারনা থাকতে হবে।
হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, তাই স্বাভাবিকভাবেই এ রোগের ওষুধও অনেক দিন ধরে ব্যবহার করতে হয়। হঠাৎ উপসর্গ কমে গেলে বা না থাকলেও কখনোই হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, অ্যাজমার চিকিৎসা প্রায় সব সময়েই দীর্ঘমেয়াদি হয়। অবশ্য এ কথার মানে এই নয় যে একজন হাঁপানি রোগীকে জীবনভর ওষুধ নিতে হবে। একজন অ্যাজমা রোগী নিয়মিত হাঁপানি প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিন থেকে পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে রোগীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
উপসর্গের তীব্রতা ও সময়ের সাথে সাথে ওষুধের মাত্রাও সাধারণত কমতে থাকে অর্থাৎ রোগের উপসর্গ কমার সাথে সাথে ধীরে ধীরে ওষুধের পরিমাণও কমিয়ে আনতে হয়। কখনোই হঠাৎ করে কমিয়ে ফেলা উচিত নয়।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রোগীর ভূমিকা সবসময়েই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে খুব ভালভাবে জানতে হবে। যেমন- কখন ওষুধের পরিমাণ বাড়াতে হবে, কী কী উপসর্গ দেখলে রোগী চিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন ইত্যাদি। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীকে অবশ্যই ওষুধ দেওয়ার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। অর্থাৎ, সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যাবহারের পদ্ধতি, সঠিকভাবে নেবুলাইজার ব্যবহার এবং সাথে সাথে এ যন্ত্রগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কেও ভাল ধারনা থাকতে হবে।
নিয়মিতভাবে সঠিক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি হাঁপানির উত্তেজক দ্রব্য থেকেও নিজেকে রক্ষার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রত্যেক রোগীর উত্তেজক দ্রব্য অথবা অ্যালার্জি ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক। সেজন্য রোগীকে তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো উত্তেজক আছে কি না সে বিষয়ে জানতে হবে এবং পরিহার করতে হবে। এ ছাড়াও কিছু সাধারণ ব্যাপারে সবসময় সচেতন থাকতে হবে, যেমন—প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান ও ধুলা থেকে সাবধান থাকতে হবে। বাসায় বড় কার্পেট ব্যাবহার না করা, বিশেষ করে শোয়ার ঘরে। বাসায় কোনো পোষা জীব, যেমন—পাখি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি না রাখা। বাসায় কোনো ধরনের কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার না করা, ভেকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার না করাই ভাল।
পূর্ব থেকে অ্যাজমা সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারনা থাকলে খুব সহজেই হঠাৎ অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয় না।
অ্যাজমা বা হাঁপানি : কেন হয়? লক্ষন ও চিকিৎসা
হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে করনীয়
গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অ্যাগেইনস্ট অ্যাজমা (জি আই এন এ) একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন, যারা অ্যাজমা নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। জি আই এন এ’র উদ্যোগ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সহযোগিতায় ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার সাধারণ মানুষ ও অ্যাজমা রোগীদের মধ্যে এ রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ব অ্যাজমা দিবস পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিনটি বিশেষ মর্যাদায় শোভাযাত্রা, পোস্টার, সেমিনার, অ্যাজমা রোগীদের সাথে মতবিনিময়, অ্যাজমা রোগের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারন মানুষকে সচেতন করা এবং অ্যাজমা রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়ে থাকে। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রোগীর ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন রোগী একটু সতর্ক হলে খুব সহজেই নিজের হাঁপানি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। একজন রোগীর তার রোগ, ওষুধপত্র, উত্তেজক দ্রব্য ও খাবার, ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ইনহেলারের কাজ ও ব্যাবহার ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারণা থাকলে খুব সহজেই হাঁপানির উপসর্গগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
চিকিৎসা
হাঁপানির চিকিৎসায় নানান ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যেমন—রোগ উপশমকারী ওষুধ, রোগ প্রতিরোধ বা বাধাপ্রদানকারী ওষুধ। এ ওষুধগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকার পাশাপাশি কীভাবে কাজ করে, সঠিক মাত্রা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও ভাল ধারনা থাকতে হবে।
হাঁপানি সম্পূর্ণভাবে ভালো করার এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।
হাঁপানি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন না করতে পারলে তা মারাত্মক হতে পারে এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে কোন কোন উপসর্গে রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সব রোগীর রোগের উপসর্গ কমা বা বাড়ার ব্যাপারে একই উত্তেজক দায়ী নয়। সঠিক চিকিৎসা ও হাঁপানির ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সম্পূর্ণ সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা এপিসট্যাক্সিস সমস্যাটি প্রায়শয়ই দেখা যায়। সাধারণত ৬০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় এটি জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়।
রক্ত পড়ার কারণ : যে কোনো বয়সের নারী/পুরুষ এ সমস্যায় পড়তে পারেন। নাক দিয়ে বিভিন্ন কারণে রক্ত পড়তে পারে। নাক, কান, গলা ছাড়াও শরীরের অন্য অনেক রোগের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।ক) অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। খ) নাকের সমস্যা : ১. আঘাতজনিত, ২.অপারেশনজনিত, ৩. নাকের সর্দি, সাইনোসাইটিস।
৪. নাকের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন যেমন- এট্রফিক রাইনাইটিস, রাইনসপো রিডিওসিস। ৫. নাকের ভিতর টিউমার। ৬. নাকের মাঝখানের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা। ৭. নাকের মাঝখানের পর্দায় ছিদ্র ইত্যাদি।
গ) সাধারণ কারণ : ১. ওষুধ সেবনের সময় (Aspirin/ Warfarin জাতীয়)। ২. উচ্চরক্তচাপ। ৩. রক্তনালির কিছু জন্মগত ত্রুটি থাকলেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। ৪. মাসিকের সময় এবং গর্ভাবস্থায়। ৫. জন্ডিস বা লিভারের প্রদাহ, লিভার সিরোসিসের মতো লিভারের অসুখ। ৬. রক্তের রোগ, যেমন- এ প্লাস্টিক অ্যানেমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, পারপুরা।
চিকিৎসা : তাত্ক্ষণিক প্রাথমিক করণীয়গুলো : ১. রক্ত পড়া শুরু হলে নাকে চাপ দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে বসে পড়তে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুল ও প্রথম আঙুল দিয়ে নাকের দুই ছিদ্র জোরে বন্ধ করুন। মুখ দিয়ে শ্বাস নিন। এভাবে ১০ মিনিট ধরে রাখুন। এ সময় আঙ্গুল ছাড়বেন না, প্রয়োজন হলে আরও বেশিক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। ২. এ সময় সম্ভব হলে কপালে, নাকের চারপাশে বরফ ধরে রাখুন। মুখের ভেতরে তালুর যে অংশ নাক বরাবর সেখানে বরফ চাপ দিয়ে ধরুন। তাহলে রক্ত পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে। ৩. যদি রক্ত ১৫-২০ মিনিটের বেশি
সময় ধরে পড়তে থাকে, তবে দেরি না করে পাশের হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে চলে যান।
প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে যা করা হয় : প্রথমে চিকিৎসক আপনাকে পরীক্ষা করে দেখবেন এবং আপনার সমস্যার মাত্রা অনুযায়ী প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ২. নাকের রক্তপাত বন্ধ করতে অনেক সময় গজ/তুলা দিয়ে নাকের ভেতরে প্যাক দিতে হয়। অনেক সময় পর্যাপ্ত প্যাক দেওয়ার জন্য রোগীকে অজ্ঞান করতে হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়। ৩. অতিরিক্ত রক্তপাত হলে রোগীকে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা : কী কারণে রক্ত পড়ছে সেটি নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হয়। নাকের সামনের দিক থেকে রক্তপাত হলে খুব দ্রুত তা বন্ধ করা যায় কিন্তু পেছন বা ভিতরের দিক থেকে রক্তপাত হলে বহু ক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে অনেক সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান লাগে। অনেক সময় নাকের এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে রক্তপাতের কারণ নির্ণয় করা হয় এবং প্রয়োজনে দায়ী রক্তনালিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাকের এন্ডোস্কপিক সার্জারি আধুনিক অপারেশন এবং রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। নাকের কারণ ছাড়া অন্যান্য শারীরিক কারণে যখন রক্তপাত হয় তখন সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা করতে হবে।
সাবধানতা : ১. নাক, কান, গলার রোগকে কখনো অবহেলা করবেন না। ২. এছাড়া নিজের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখুন। ৩. রক্ত পড়াকালে শোবেন না। ৪. নাকে হাত দেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। ৫. শিশুদের নখ ছোট রাখতে হবে। ৬. শুষ্ক মৌসুমে নাক যাতে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়, তার জন্য নাকের সামনের দিকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।